আরজি করের ঘটনার পরে আন্দোলনকারীদের অনেকেই পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। এবার যৌন হেনস্থা ঠেকাতে অভিভাবক এবং তাঁদের সন্তানদের প্রতিবাদী হয়ে ওঠারই পরামর্শ দিল পুলিশ।
বিধাননগর পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার সম্বিতী চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের প্রতিবাদ করা শেখান। প্রোটেস্ট করার শিক্ষা পরিবার থেকেই হওয়া উচিত। লোকে কী বলবে, সমাজ মেনে নেবে না, এমন কিছু বলবেন না। সমাজের ভয়ে প্রতিবাদের সাহসটা চলে যায়। এগুলোও হেনস্থার কারণ।’
বিশেষজ্ঞদের অবশ্য বক্তব্য, রাস্তার প্রতিবাদের থেকেও সম্বিতী আসলে বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে বা যে কোনও জায়গায় চুপিসারে ঘটে যাওয়া হেনস্থার ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদের কথা বলেছেন।
তাঁর কথায়, ‘শরীরিক বলপ্রয়োগ করাটাই শুধু ধর্ষণ নয়, মানসিক এবং মৌখিক ভাবেও ধর্ষণ করা যায়। ধর্ষণ, হেনস্থা ঠেকাতে আইন আছে, সেখানে আমরা আছি। কিন্তু প্রিভেনশন ইজ় বেটার দ্যান কিওর। তাই সচেতনতা এবং প্রতিবাদ যত হবে, ততই ভালো। ততই এ সব ঠেকানো যাবে।’
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা আবহেই এই কর্মশালার আয়োজন করেছিল সল্টলেক ইনস্টিটিউট অফ পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ভ্যালু এডুকেশন। যৌন হেনস্থার মানসিকতা দূর করতে ছোট থেকেই কী ভাবে প্রশিক্ষণ দরকার, তাই ছিল এ দিনের আলোচনার বিষয়।
যৌন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও এ দিন তুলে ধরেন অনেক বিশেষজ্ঞ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাঞ্জন পানের বক্তব্য, ‘একটা বয়সের পর বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিতে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যৌনতা বা সেক্স নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন বাবা–মায়েরা।’ কিন্তু ভারতীয় সমাজে যেখানে সেক্স বা যৌনতা সম্পর্কে নানা ট্যাবু কাজ করে, সেখানে এই খোলামেলা আলোচনা করা কি সম্ভব তা নিয়ে। এই প্রসঙ্গে দেবাঞ্জনের জবাব, ‘এই ট্যাবুটা ভাঙতেই হবে।
সন্তানকে সব থেকে ভালো বোঝেন তাঁদের বাবা–মায়েরাই। যৌন শিক্ষা যদি তাঁরা এড়িয়ে যান, কথা না বলেন, তা হলে সন্তানের মনে নানা ধরনের প্রশ্ন ধোঁয়াশা তৈরি হবে। তার জন্য সন্তান যদি পর্নোগ্রাফির প্রতি সন্তান আসক্ত হয়ে পড়ে, তা হলে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে।’
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শ্রেয়ষী চট্টোপাধ্যায়ের সংযোজন, ‘ছেলেদের বাবা–মায়েরা বিশেষ করে সতর্ক থাকুন। ছেলেরা কাঁদে না, ছেলেরা রাফ অ্যান্ড টাফ হয় এই ধরনের শিক্ষা দেবেন না। এ গুলোই পরে ছেলেটির মধ্যে নারী বিদ্বেষের জন্ম দেয়।’