শুধু শহর কলকাতাই নয়, এবার হেলে পড়া বহুতলের ছবি ধরা পড়ল বিধান নগর পুর এলাকাতেও। একটু নজর করলেই দেখা যাচ্ছে, এক ফ্ল্যাটের বারান্দা ঝুঁকে পড়ছে পাশের বাড়ির কার্নিশে। হেলে যাওয়া বাড়ির পাশাপাশি পাশের বাড়ির বাসিন্দারাও দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্কে। ট্যাংরা, বাঘাযতীন, আগরপাড়ার পর বাগুইআটি জগতপুরে দেখা গেল সেই একই ছবি। পরপর দুটি বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। দায় এড়াচ্ছেন বর্তমান ও প্রাক্তন কাউন্সিলর। অন্যদিকে, ৩ নং ওয়ার্ড এলাকার দক্ষিণ নারায়ণপুরের একটি বাড়িও হেলে পড়েছে। দুই এলাকায় এভাবে বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। ঘটনায় শোরগোল পড়তেই আসরে নেমেছেন দুই কাউন্সিলর। তাঁদের দাবি, এসব আবাসন অনেক আগেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে তৈরি হয়েছে। এনিয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।
বিধাননগর পুরনিগমের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাগুইহাটির জগতপুর নেতাজি পল্লির দুটি বিল্ডিং এমন ভাবে হেলে তা দেখে মনে হচ্ছে একটি বিল্ডিং অপর বিল্ডিং-এর গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ঝিনুক মণ্ডল বাড়ি দুটি র হেলে পড়ার ঘটনা জানিয়ে বিধাননগর পুরনিগমে লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁর দাবি, তাঁর আমলে এই সব বাড়ি তৈরি হয়নি। কাউন্সিলর বলেন, ‘আমি নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কড়া পদক্ষেপ করব। অনুমতি ছাড়া কোনও বিল্ডিং করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কারও ব্যক্তিগত বাড়িতে আমরা হাত দিতে পারি না।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুকুর বুজিয়ে মাত্র কয়েক ছটাক জমির উপরেই গড়ে উঠেছে এই বাড়িগুলো। কয়েক বছরের মধ্যেই একে অপরের গায়ে হেলে পড়ছে সেগুলি। বিপজ্জজনকভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ির মালিক মিঠুন কর এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে, এমনটাই আশঙ্কা স্থানীয় কাউন্সিলরের। তবে পূর্বতন তৃণমূল কাউন্সিলর আশা নন্দী সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না।
এরই পাশাপাশি বিধাননগর পৌরনিগমের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ নারায়ণপুর অঞ্চলে একটি বিল্ডিংয়ের হেলে পড়ার ছবি সামনে এসেছে। অভিযোগ উঠছে, গোটা বিল্ডিংটাই অবৈধভাবে নির্মাণ হয়েছে। এনিয়ে ৩ নং কাউন্সিলর আরাত্রিকা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘কয়েকদিন আগে এই বহুতলের কথা আমরা জানতে পারি। জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এটা পৌরনিগমে জানাই, কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়। ওই বিল্ডিংয়ে নার্সিং ট্রেনিং নিচ্ছে, এমন প্রচুর মেয়ে থাকে। তাঁরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে যে এতজন বাসিন্দাকে সরাতে সময় লাগবে। আশা করি, এক-দুদিনের মধ্যে শিফট হয়ে যাবে। তারপর বহুতলটা ভেঙে ফেলার অর্ডার দিক পৌরনিগম, এই আবেদন জানিয়েছি আমরা।’
এদিকে, এই দৃশ্য দেখে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘কলকাতার উপকন্ঠে দমদম, পানিহাটি, কামারহাটি সহ একাধিক জায়গায় বেআইনিভাবে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। যেখানে ৫ তলা বাড়ি তৈরির অনুমতি পাওয়া উচিত নয়, সেথানে ৮ তলা বাড়ি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। টাকা দিলেই সব হয়ে যায়।’