ফের কাঠগড়ায় আরজি কর। এবার অভিযোগ উঠল প্রেসক্রিপশন লেখা নিয়ে। রোগীর চিকিৎসার স্বার্থে নয়, বরং সন্দেহজনক আর্থিক লাভের লক্ষ্যেই প্রেসক্রিপশনে লেখা হচ্ছে দেদার খরচাসাপেক্ষ পরীক্ষা। এমনই অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা সামনে এসেছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। একইসঙ্গে এ অভিযোগও উঠেছে, একের পর এক সিটি স্ক্যান বা এমআরআইয়ের মতো ব্যয়বহুল টেস্টের সুপারিশ করা হচ্ছে এমন সব চিকিৎসকদের নামে, যাঁদের এসব পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়ার কথা নয়।
সূত্রের খবর, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছেন ব্রেন সিটি স্ক্যান। আবার ল্যাবরেটরি মেডিসিন বা বায়োকেমিস্ট্রির চিকিৎসকের নামে থাকছে এমআরআইয়ের নির্দেশ। অথচ এমনটা হওয়ার তো কতাই নয়। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে নকল রেজিস্ট্রেশন নম্বরও। আরও চমকে দেওয়ার মতো তথ্য, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে গিয়ে যখন ওইসব প্রেসক্রিপশন জমা পড়ছে, তখন সেখানে থাকা চিকিৎসকের নাম ও মোবাইল নম্বর দেওয়া হচ্ছে। বিলিংয়ের সময় সেই নম্বরে অটোমেটিক এসএমএস যাচ্ছে। ফোনে মেসেজ পেয়ে বিস্মিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাই, কারণ, রোগী বা প্রেসক্রিপশনের নাম–ঠিকানার বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না, এমনটাই দাবি করছেন তাঁরা। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আপাতত আরজি করের একটি তদন্ত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভবনেও বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মতো রেডিয়োলজি পরীক্ষার সুপারিশ করার অধিকার রয়েছে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পদমর্যাদার চিকিৎসকদের। অন্তত অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হওয়া আবশ্যিক। অথচ, বর্তমানে নানা বিভাগের এমন চিকিৎসকদের নামেই প্রেসক্রিপশন জমা পড়ছে, যাঁদের পক্ষে এসব লেখা নিয়মবিরুদ্ধ। এই প্রসঙ্গে হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ তথা মেডিক্যাল সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে প্রমাণ মিললে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বছর এই হাসপাতাল ঘিরে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছিল তরুণী চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে। গ্রেফতার হয়েছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে আরও নানা অনিয়ম। এই ভুয়ো প্রেসক্রিপশন কারা বানাচ্ছে, কারা ব্যবহার করছে, আর আদৌ এর পেছনে কোনও ‘চক্র’ সক্রিয় রয়েছে কি না, সেই উত্তর এখন খুঁজছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।