ওআমআর শিট প্রকাশের যে নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেই নির্দেশই বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও। প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগের মধ্যে ওএমআর শিট প্রকাশের আবেদন জানিয়েছিলেন ববিতা সরকার। ববিতা সরকারের আবেদন ছিল, ২০১৬ সালের একাদশ-দ্বাদশের মেধাতালিকা ও সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হোক, তাহলেই স্পষ্ট হবে কারও চাকরির পিছনে দুর্নীতি ছিল কি না। হাইকোর্টের নির্দেশে যাঁর চাকরি চলে গিয়েছে, সেই ববিতার আর্জি মেনে ৫৫০০ জনের উত্তরপত্র প্রকাশ করার নির্দেশও দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার সিঙ্গল বেঞ্চের সেই নির্দেশ বহাল রাখল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও। একইসঙ্গে কমিশনকে শীঘ্র উত্তরপত্র প্রকাশের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। তবে কমিশনের আবেদন মেনে উত্তরপত্র অর্থাৎ ওএমআর শিট প্রকাশের সময়সীমা বাড়াল ডিভিশন বেঞ্চ। এসএসসি-র আবেদনে ২১ জুলাইয়ের পরিবর্তে উত্তরপত্র প্রকাশের জন্য সময়সীমা বাড়িয়ে ২৮ জুলাই করা হয়েছে।
এরই পাশাপাশি তালিকায় নাম প্রকাশের পর যদি কোনও শিক্ষকের চাকরি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকে তাহলে সিঙ্গেল বেঞ্চ আগে তাদের শুনানির সুযোগ দেবে। তারপরেও সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত যে এসএলপি আছে তার নিষ্পত্তি হওয়ার পরেই তাদের চাকরি নিয়ে পদক্ষেপ করা যাবে। একইসঙ্গে আদালত নিজের পর্যবেক্ষণে জানায়, ‘পাবলিক সার্ভিস নিয়ে দুর্নীতি হলে কোনও আদালতই চোখ বুঝে থাকতে পারে না। এইক্ষেত্রেও কোর্ট সেটা অস্বীকার করতে পারে না।’
প্রসঙ্গত, উত্তরপত্র প্রকাশ হলে চাকরি চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়ে কয়েকজন কর্মরত শিক্ষক ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। বুধবার বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলা হয়,উত্তরপত্র প্রকাশে বাধা কোথায় তা নিয়েই। তবে ওএমআর প্রকাশের পর যদি কারও নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে,সেক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য সিঙ্গল বেঞ্চকে শোনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, ববিতার এই আর্জি শোনার পর এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে কারও চাকরি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সে ক্ষেত্রে সুযোগ পেতে পারেন ববিতা।
এদিনের এই মামলা চলাকালীন আবেদনকারীদের আইনজীবী প্রশ্ন করেন,’ ববিতা সরকার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শূন্যপদে চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তাহলে কেন সব নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করতে হবে? ওএমআর প্রকাশের জন্য ববিতা কোনও লিখিত আবেদন করেননি।’ এরই পাশাপাশি মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে কেন সিঙ্গেল বেঞ্চ এমন একটি নির্দেশ দিল,তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা চলছে। অগাস্ট মাসে রয়েছে পরবর্তী শুনানি। ততদিন পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ স্থগিত রাখার আর্জি জানান মামলাকারীরা। এরই প্রত্যুত্তরে এদিন ডিভিশন বেঞ্চের তরফে প্রশ্ন করা হয়,তালিকা প্রকাশের বাধা কোথায়? তালিকায় যদি দেখা যায়, কারও নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে,তাঁকে আগে শুনানির সুযোগ দিতে হবে। তারপর পদক্ষেপ করবে সিঙ্গল বেঞ্চ। এসএসসি-র আবেদন মেনে ২১ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৮ জুলাই পর্যন্ত তালিকা প্রকাশের সময় বাড়িয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, পাবলিক সার্ভিস নিয়ে দুর্নীতি হলে কোনও কোর্ট চোখ বুজে থাকতে পারে না। এক্ষেত্রেও আদালত সেটা অস্বীকার করতে পারে না।
এই প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এদিন মামলাকারীদের সম্পর্কে বলেন,‘তার মানে মনে ভয় আছে। ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে তালিকা প্রকাশ হলে চাকরি চলে যাবে।’ তাঁর দাবি, সঠিক পথে চাকরি পেলে তো ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। আইনজীবী আরও বলেন, ‘কীভাবে তাঁরা চাকরিটা পেয়েছেন,আসল ঘটনাটা তাঁরাই নিজেরা সবথেকে ভাল জানেন। সঠিক পথে চাকরি পেলে কেন ভয় পাচ্ছেন?’
অন্যদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সিবিআই যে হার্ডডিস্ক উদ্ধার করে, তার সঙ্গে এসএসসি-র নথি মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টেও হলফনামা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা। উল্লেখ্য, ববিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর স্নাতকোত্তরের প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল, সে কারণেই অ্যাকাডেমিক স্কোরও বেড়ে গিয়েছিল। আদালতের নির্দেশে চাকরি চলে যায় ববিতার।