বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শাসকদলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। শুক্রবার বিধানসভায় ডেবরায় বিধায়ক প্রশ্নোত্তর পর্বে জানতে চান, তফসিলি জাতি উপজাতি মহিলাদের মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অর্থ ১০০০ টাকা দেওয়া হবে কি না তা নিয়েই। উত্তরে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, ‘ধর্মীয়ভাবে এটা করা হয় না। এটা প্রান্তিক মানুষদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করেছেন।’ একইসঙ্গে মন্ত্রী শশী পাঁজা আরও জানান, এই মুহূর্তে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপভোক্তার সংখ্যা ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৩ জন। এই উত্তর পর্ব চলাকালীনই প্রতীচি ট্রাস্টের একটি রিপোর্ট তুলে ধরে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘সংখ্যালঘু মহিলাদের অবস্থা আর্থিকভাবে ভাল না। আমরা যখন পঞ্চায়েতের ভোট প্রচারে গিয়েছিলাম, তখন ওই সম্প্রদায়ের মহিলাদের একাংশ বলেছিলেন, তাঁরাও তো ভোট দেন, কিন্তু ৫০০ টাকা করে কেন পাচ্ছেন? যেখানে তফসিলি মহিলারা ১০০০ টাকা করে পাচ্ছেন।’ উত্তরে মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, ‘উনি অন্য কোনও দলের থেকে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা শুনে থাকতে পারেন। এটা রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে নির্দিষ্ট মাপকাঠি অনুসারে সকলকে দেওয়া হচ্ছে।’ জবাবে হুমায়ুন আবার বলেন, ‘আমি বুঝেছি এটা ধর্মীয় ভাবে হয় না। অন্তত ওবিসি মুসলমান মহিলাদের ১০০০ টাকা করে দেওয়া হোক।’
এদিকে শাসকদলের পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, তাঁরা হুমায়ুনকে বলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পটি মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। তাই এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে পরিষদীয় দলের সঙ্গে হুমায়ুনের আলোচনা করা উচিত ছিল।
শশীর জবাব সম্পন্ন হলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় হুমায়ুনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি অমর্ত্য সেনের রিপোর্টের কথা বলছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উল্লিখিত রিপোর্টটি আপনি টেবিলে জমা দেবেন।’ সঙ্গে এ অনুরোধও করেন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে আপনি যখন প্রশ্ন করছেন, তখন বাংলাতে করুন।’
এরপর তিনি নিজের প্রশ্ন প্রসঙ্গে সাফাই দিয়ে বলেন, ‘রাজ্যে মুসলিম মহিলাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষার মাধ্যমে এই চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। সরকারের পক্ষে কখনওই জাতিভিত্তিক এই ধরনের সমীক্ষা করানো সম্ভব নয়।’
তৃণমূল বিধায়কের এমন দাবি প্রসঙ্গে বিজেপি পরিষদীয় দলের সদস্য তথা ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি জানান, ‘তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুনবাবু বিধানসভায় যে দাবি তুলেছেন তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এই সরকার বার বার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করছেন এবং তাদের উন্নয়ন সরকার পক্ষ নিজেই চায় না। তাই যে প্রস্তাব তিনি সদনে তুলে ধরেছেন, সেই প্রস্তাব যদি এই সরকার মেনে না নেয়, তাহলে সংখ্যালঘুদের কাছে এই সরকারের আসল রূপ প্রকাশ পেয়ে যাবে। এবং তাদের যে কেবল ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা প্রমাণ হয়ে যাবে।’ সঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবুর সংযোজন, ‘আমি মনে করি হুমায়ুনের তোলা দাবি যদি এই রাজ্য সরকার পূরণ না করেন, তবে তাঁর বিধায়ক পদ এবং তৃণমূল দল থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত।’