শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ চাঁদের কক্ষপথে সফল ভাবে প্রবেশ করল চন্দ্রযান-৩। একইসঙ্গে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের আওতাতেও পৌঁছে গেল। এরপরই শনিবার ইসরোর তরফে টুইটে জানানো হয়, ‘আমি চন্দ্র মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করছি।’ চাঁদের কক্ষপথে সফল ভাবে প্রবেশ করেছে চন্দ্রযান-৩। বেঙ্গালুরু মিশন অপারেশন কমপ্লেক্স মক্স ইসট্রাক থেকে এই কৌশল সম্পাদিত হয়। পরবর্তী অপারেশন – কক্ষপথ হ্রাস। ৬ অগাস্ট ২০২৩ রাত ১১টায় সেই পর্যায়টি সম্পন্ন হবে।তবে চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান ৩- এর ল্যান্ডিং নিয়ে ইসরোর সামনে যে সমস্ত চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তারমধ্যে একটি হল চাঁদের ধূলিকণা। তার দাপট পার করাও একটি বড় দিক।
চাঁদের কক্ষপথ ঘিরে প্রখর নজর রেখেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ইসরো সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে শ্রীহরিকোটা থেকে উত্ক্ষেপণ হয় চন্দ্রযান-৩। তারপর ২২ দিন পর এদিন সন্ধ্যায় চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে চন্দ্রযান-৩। ইসরো জানিয়েছে, ৭টা ১২ মিনিটে অপারেশন শুরু হয়। ১৮৩৫ সেকেন্ড ধরে চলে। তাতেই লক্ষ্যপূরণ। চাঁদের ১৬৪ কিলোমিটার বাই ১৮ হাজার ৭৪ কিলোমিটারের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৌঁছে গিয়েছে চন্দ্রযান-৩। এই নিয়ে তৃতীয় বার চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছল ইসরো। পরবর্তী অপারেশন আগামিকাল রাত ১১টায়। সুতরাং এবার চাঁদের আরও কাছে যাওয়ার পালা ইসরোর চন্দ্রযানের। দফায়-দফায় ৫ বার চাঁদের কক্ষপথ বদলাবে চন্দ্রযান-৩। এরপর যানের প্রাথমিক লক্ষ্য, চাঁদের ১০০ কিলোমিটারের গোলাকার কক্ষপথে পৌঁছনো। তারপর আগামী ১৭ অগস্ট প্রপালশন মডিউল থেকে ল্যান্ডার বিচ্ছিন্ন হবে। সেটাই বড় পরীক্ষা। এরপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৩ অগস্ট বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে ল্যান্ডার বিক্রম। চাঁদের চারটি কক্ষপথ পার করে এগোনোর কথা চন্দ্রযান-৩ এর। ১০০ কিলোমিটারের গোলাকার কক্ষপথ পার করে তারপরই চাঁদের পিঠে নামার সেই মাহেন্দ্রক্ষণে প্রবেশের কথা রয়েছে এই মহাকাশযানের।
তবে এখনও বাকি অনেক পথ। গোটা যাত্রাপথে চন্দ্রযান-৩ এর সবচেয়ে কঠিন পর্ব হল শেষ পর্বটি। ওই পর্বে রোভার প্রজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়ে একেবারে হালকাভাবে চাঁদের মাটিতে ‘সফ্ট ল্যান্ডিং’ করার কথা রয়েছে ‘বিক্রম’ ল্যান্ডারের। ৪ বছর আগে ২০১৯ সালে এই পর্যায়ে এসে ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। উল্লেখ্য, প্রতি সেকেন্ডে দু’মিটার বেগে ল্যান্ডারের অবতরণ করার বিষয়টি সুরক্ষিত বলা যেতে পারে। তার পরেও পরিস্থিতি যদি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে গতিবেগ বাড়িয়ে ল্যান্ডার অবতরণ করানো যেতেই পারে বলে জানিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
এবার চাঁদে অবতরণের জন্য যে জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে, তার পরিধি গতবারের তুলনায় অনেকটা বেশি৷ গতবার চাঁদে অবতরণের জন্য ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-র কাছে মাত্র ৫০০ মিটার জায়গা ছিল। এবার সেটা বাড়িয়ে ৪ কিলোমিটার করা হয়েছে। রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে নেমে চাঁদের মাটির চরিত্র, বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে। সূর্যোদয়ের মুহূর্তে চাঁদের পিঠে অবতরণ করবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্যাস্ত যাওয়ায় দু’সপ্তাহ পরে শেষ হবে তার কাজ।
ইসরোরর তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, রোভার ‘প্রজ্ঞান’-এর চাকা চাঁদের পিঠে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে ইসরো ও ভারতের অশোক স্তম্ভের ছাপ রাখবে। আর সে হবে এক গর্বের মুহূর্ত। চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণে বহু সংস্থার অবদান রয়েছে। অবদান রয়েছে লার্সেন অ্যান্ড টুবরো, হিন্দুস্তান এওরোনটিক্স, ভারত হেভি ইলেকট্রনিক্স, পারস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজিসের মতো একাধিক সংস্থার।