২০ জুন, মঙ্গলবার রথযাত্রার দিন রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের আয়োজন করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্য সরকারকে ‘অন্ধকার’-এ রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সোমবার চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই রাজ্যপালের সঙ্গে টেলিফোনিক কথোপকথনে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ক্ষোভের কথাও জানান। এদিকে এই ইস্যুতে রাজ্যপালকে সি ভি আনন্দ বোসকে যে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই চিঠিও প্রকাশ করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এই চিঠিতেই রাজ্যপালের সঙ্গে টেলিফোনিক কথোপকথনের বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে নবান্ন সূত্রে খবর, ফোনে মমতা রাজ্যপালকে প্রশ্ন করেন কী ভাবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়া, সম্পূর্ণ একতরফাভাবে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যপাল তা জানতে চেয়ে। এরপর মমতার লেখা চিঠি অনুযায়ী রাজ্যপাল ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন না করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে চিঠিতে যা নজরে এসেছে তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে লেখেন, ‘এক তরফাভাবে আপনার এই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের কথা জানতে পেরে আমি খুব অবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আমাদের টেলিফোনিক কথোপকথনে আপনি স্বীকার করেছেন যে এক তরফাভাবে কোনও একটি দিনকে রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার কাজটি ঠিক হয়নি। এবং আপনি অনুষ্ঠান না পালনের আশ্বাস দিয়েছেন।’
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় চিঠিতে এও লেখেন, ‘১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আমরা কখনও এই রাজ্যে নির্দিষ্ট কোনও দিনকে রাজ্য দিবস হিসেবে পালন করিনি। বরং ইতিহাস থেকে আমরা জেনেছি দেশভাগের কারণে অনেক জায়গায় সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান হতে পারে, যা প্রতিহিংসা দ্বার প্রশয় পায়। কিন্তু এটা কখনওই কোনও সরকারের অনুষ্ঠান হতে পারে না। সরকার বা মন্ত্রিসভার অনুমোদন না নিয়ে আপনার এই একতরফা সিদ্ধান্ত রাজ্যের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে। এই কাজ রাজ্যের লাখ লাখ মানুষের আবেগকে অপমান করেছে।’ এখানেই শেষ নয়, সঙ্গে মমতা এও জানান, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রকের তরফে যদি এই নিয়ে কোনও নির্দেশিকা আসে, আমরা তীব্রভাবে তাঁর প্রতিবাদ করব। আমি আপনাকে অনুরোধ করব এমন কোনও অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন না, যা রাজ্যের কোটি কোটি মানুষকে তিক্ততার ইতিহাস মনে করাতে বাধ্য করে।’ এদিকে বঙ্গ রাজনীতিবিদদের ধারনা, এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পিছনে ইন্ধন রয়েছে গেরুয়া শিবিরের।