প্রজ্ঞাদীপার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ময়নাতদন্ত নিয়ে রাজ্য পুলিশকে ভর্ৎসনা আদালতের

ব্যারাকপুরের মহিলা চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এবার রাজ্য পুলিশকে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। এরই পাশাপাশি মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও  এদিন আদালতে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় বিচারপতি জয় সেনগুপ্তকে। কারণ, মৃতার দেহে ১৪টি ক্ষত থাকা সত্ত্বেও কেন খুনের ধারা যোগ করে তদন্ত করা হয়নি তা এদিন জানতে চান বিচারপতি। একইসঙ্গে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের একাধিক ফাঁকও সামনে আনেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ নিয়ে কেন দিক নির্দেশ করেননি তা নিয়েও ক্ষুব্ধ আদালত।
এদিন চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার শুনানিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এদিন মন্তব্য করতে শোনা যায়,’যদি গলায় ফাঁস দিয়ে ঝোলার কারণে কারও মৃত্যু হয়,তাহলে দেহ ক্ষতচিহ্ন কিসের? ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কেন সে ব্যাপারে কোনও দিক নির্দেশ করেননি?’ময়নাতদন্তের রিপোর্টে একাধিক প্রশ্নে ধোঁয়াশা থাকায় রিপোর্ট এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের দিয়ে দেখিয়ে দ্বিতীয় মতামত নেওয়ার নির্দেশও এদিন দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত নির্দেশ দেন, অবিলম্বে প্রজ্ঞাদীপা হালদারের মায়ের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। ২১ অগাস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে সমস্ত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
এর জবাবে রাজ্যের তরফে জানানো হয়,’ডাক্তারের রিপোর্ট বলছে, গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলার ফলে মৃত্যু। ঘটনাস্থলে সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছে। হতাশা গ্রাস করেছিল তাঁকে,তার কিছু প্রমাণ মিলেছে।’এই জবাবে মোটেই সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। উত্তর শুনে বিচারপতি সেনগুপ্ত বলেন,’দেহে এত ক্ষত কী করে তা জানা জরুরি। আসল পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও কেস ডাইরি দেখা দরকার।’ এখানেই শেষ নয়, বিচারপতি জানতে চান,কেন তদন্তকারী আধিকারিক ভিডিয়োগ্রাফি করেননি। এদিন শুনানিতে এই ঘটনার তদন্তে একাধিক গাফিলতি চিহ্নিত করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তদন্তে যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের।
এদিকে প্রজ্ঞাদীপা হালদারের পরিবারের তরফ থেকে উপস্থিত আইনজীবী আদালতের কাছে অভিযোগ জানান,মামলায় মৃতার মায়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে পরিবারের তরফে আদালতে অভিযোগ করা হয়,অভিযুক্ত একজন চিকিৎসক। তিনি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে ফোন করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন বলে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে । এমনকী ঘটনাস্থলে মৃতের দেহের ভিডিয়ো রেকর্ডিং পুলিশ করলেও সেসব তদন্তে সামনে আনা হচ্ছে না বলেও আদালতে অভিযোগ জানানো হয়। উল্লেখ্য,ভিডিয়োগ্রাফি কেন করা হয়নি তা নিয়ে আদালত আগেই প্রশ্ন করেন তদন্তকারীদের।
প্রসঙ্গত,গত ১৯ জুন ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির অফিসার্স কোয়ার্টার্স ‘ম্যান্ডেলা হাউস’-এর ২০ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় চিকিৎসক প্রজ্ঞাদীপা হালদারের ঝুলন্ত দেহ। তিনি জাগুলিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক। লেখিকা হিসেবেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিলেন জনপ্রিয়। মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হন ভারতীয় সেনার চিকিৎসক কৌশিক সর্বাধিকারী। বর্তমানে তিনি জেল হেফাজতে আছেন। তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুইসাইড নোটেও প্রজ্ঞাদীপা দায়ী করেছিলেন কৌশিককে। প্রজ্ঞাদীপার পরিচিতদের অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করতেন কৌশিক। এমনকী তরুণীর মা-ও সেই ঘটনা জানিয়েছিলেন পুলিশকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × one =