যাদবপুরের প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর পর থেকেই গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন অরিত্র মজুমদার। তাঁর নামে পোস্টারও পড়েছিল ক্যাম্পাসে। যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুতে তাঁর নাম উঠেছিল। অভিযোগ ওঠে, তিনিই নাকি মৃত্যুর পর তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছিলেন। যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ১১ দিন পর প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায় সেই অরিত্র ওরফে আলুকে। নিজের সামাজিক মাধ্যমে তিনি সাফাই দিয়ে দাবি করেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ ৯ অগাস্ট তিনি হস্টেলে যাননি। এবং তারপর কাশ্মীরে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। প্রমাণ স্বরূপ তিনি বিমানের টিকিটের ছবিও ফেসবুকে দেন। এদিকে নিজের স্বপক্ষে যুক্তি খাাড়া করতে গিয়ে আলু পড়লেন আরও বড় এক প্রশ্নের মুখে। ফেসবুক পোস্টে ট্রেন ও ফ্লাইটের যে সংস্থার টিকিট শেয়ার করেছেন তিনি, আদতে সেই সংস্থা সাময়িকভাবে এখন পরিষেবা বন্ধ রেখেছে। এমনকি আরও বিস্ফোরক তথ্য, রেজিস্ট্রার খাতাতেই ১১ তারিখে প্রেজেন্টও রয়েছেন অরিত্র।
অরিত্র ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, তিনি দিল্লিতে গিয়েছিলেন রাজধানী এক্সপ্রেসে। তারপর সেখান থেকে বিমানে কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ভাবে যে কোম্পানির ফ্লাইটের টিকিট তিনি কাটেন, সেই কোম্পানির ফ্লাইট দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ, প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে। যা ওই বিমান কোম্পানি টুইট করে জানিয়েছিল। তাহলে যে টিকিট অরিত্র পোস্ট করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি টিকিট কেটেছেন ২৩ এপ্রিল। আর তার যাত্রার তারিখ ১১ অগাস্ট। এদিকে আবার বিমান কোম্পানির নোটিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে ১১ তারিখ তাদের কোনও বিমান পরিষেবা নেই। যদি বিমান পরিষেবা নাই থাকে তাহলে কীভাবে অরিত্র মজুমদার কাশ্মীর পৌঁছালেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
এরপর ফের ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা যায় অরিত্রকে। সেখান অরিত্র যে বেসরকারি বিমান কোম্পানির পরিষেবা বন্ধ ছিল, তার বাতিলের মেসেজ এবং অন্য একটি বিমান কোম্পানি থেকে কাটা টিকিট ও ট্রেকিংয়ের অনুমতি পত্র দিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেন।
এখানেই প্রশ্ন, নিজের পক্ষে যখন সাফাই দিচ্ছেন অরিত্র, তখন দু’সময়ে দু’ধরনের পোস্ট কেন তা নিয়েই। এদিকে কলেজের রেজিস্টার খাতার একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল। সেখানে স্পষ্ট নজরে আসছে ১১ তারিখ সই করেছেন তিনি। ফলে পাশাপাশি তাঁর টিকিটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি যদি ১১ তারিখ কাশ্মীরেই থাকেন, তাহলে কীভাবে রেজিস্টার খাতায় তাঁর সই এল তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রভাবশালী’ ছাত্রনেতা হিসাবে পরিচিতি রয়েছে অরিত্র মজুমদারের। তাঁর কথাতেই একসময় ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগের সমস্ত জিবি বৈঠক, আন্দোলন পরিচালিত হত। সর্বদাই আন্দোলনের সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্বও দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, অরিত্রকে এবার তলব করেছে যাদবপুরের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। বুধবার সকাল সাড়ে এগাোরটায় ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে খবর। এর আগে সোমবার তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই বার্তা তাঁর কাছে না পৌঁছানোয় এদিন ফের তাঁকে তলব করা হয়। এদিকে সূত্রের খবর, এমন এক ঘটনায় চলাচালীন কেন সে অনুপস্থিত তা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতে পারে যাদবপুরের আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এমনটাই মনে করা হচ্ছে। সঙ্গে প্রশ্ন করা হতে পারে, কেন তাঁর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ উঠে আসছে তা নিয়েও।