সকাল থেকে বোমাবাজির ঘটনা দেগঙ্গায়। আর রাতে বোমার আঘাতে প্রাণ গেল জলজ্যান্ত এক নাবালকের। মৃত স্কুল ছাত্রের নাম ইমরান বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখেই এমনই এক অঘটন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দেগঙ্গায়। অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের একটি মিছিল থেকে ফেরত আসা কর্মীদের উপর বোমা ছোড়া হয়। এই বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় বছর সতেরোর ইমরান খানের। আর এই বোমাবাজি ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠল দেগঙ্গা। কারণ, এই বোমাবাজির পর তৃণমূলের তরফ থেকে পাল্টা হামলা চালানো হয় সিপিআইএম, আইএসএফ কর্মীদের বাড়িতেও।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার রাতে সোহাইশেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারে বেরিয়েছিল তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি দল৷ দলের পুরভাগে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি মফিদুল হক সাহজির ভাই রিঙ্কু শাহজি৷ রিঙ্কু এলাকার বিদায়ী উপ প্রধানও৷ রিঙ্কুর নেতৃত্বেই এলাকার ১০-১৫ জন তৃণমূলকর্মী প্রচার চালাচ্ছিল৷ অভিযোগ, রাত ১১টা নাগাদ সেই দল পৌঁছয় গাঙ্গাটি এলাকায়৷ সেই সময়ই নাকি তৃণমূলের সেই প্রচার মিছিল ঘিরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একটি বোমা সরাসরি কাঁধে এসে পড়ে বছর সতেরোর ইমরান খানের। সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। জানা গিয়েছে, বোমার স্পলিন্টারের আঘাতে আহত হন আরও ২-৩ জন৷ ঘটনার কথা ছড়িয়ে পরতেই এলাকায় অশান্তি ছড়ায়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বেশ কিছু সিপিআইএম এবং আইএসএফ কর্মীদের বাড়িতে। এদিকে গোটা ঘটনার তদন্তে দেগঙ্গ থানার পুলিশ। কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে এ খবরও মিলছে, মঙ্গলবার পতাকা বাঁধাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং আইএসএফএর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার চাকলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই গোষ্ঠী। ২৩০ এবং ২০৯ নম্বর বুথ এলাকায় দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ হয়। ঘটনায় ১৫ জন কর্মী, সমর্থকদের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। নামানো হয় র্যাফও।
এই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, সিপিএমের সঙ্গে আইএসএফ আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে সিপিএম এবং আইএসএফের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে বুধবার এই ঘটনা জানার পরই এদিন দেগঙ্গায় নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন রাজ্যপাল সি বি আনন্দ বোস। সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন। প্রয়োজনে দেগঙ্গা যাবেন বলেও নিহতের পরিবারকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
এদিকে বারাসাতের সাংসদ তথা বারাসাত সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কাকলি ঘোষ দস্তিদার ঘটনার তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি দলীয় কর্মীর পরিবারের সদস্যদের সমবেদনাও জানান।পরিবাবের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন। সঙ্গে এও বলেন, ‘সিপিএম আইএসএফ কে নিয়ে মৃত্যু খেলায় নেমেছে। ওরা বাম জামানার অত্যাচার ফিরিয়ে আনতে চাইছে। ভোটের আগে হিংসার রাজনীতি করছে। এটা তৃণমূল কংগ্রেস ও সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়বো।‘