শুক্রবার প্রথম পর্বে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা জেরা মেটার পর আগামী ৫ জুলাই ফের সায়নী ঘোষকে তলব করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার সকালে ইডি দপ্তরে ঢোকার সময়ে সায়নীকে দৃশ্যত প্রত্যয়ী লেগেছিল। সে প্রত্যয় দেখা গিয়েছে বেরনোর সময়েও। আর বেরিয়েই তিনি জানান, ‘প্রাথমিক কিছু নথি নিয়ে ডেকেছিলেন। কিছু নথি আনতে বলেছিলেন। তদন্তে আমি ১০০ শতাংশ সহযোগিতা করেছি। তদন্তকারীরা তলব করলে আবারও আসবো।’ আর তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফের তলব করা হল তৃণমূলের এই যুবনেত্রীকে। ইডি সূত্রের খবর, অনেক প্রশ্নের সে অর্থে উত্তরই দেননি যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। আর সেই কারণেই সায়নীর উত্তরে ইডি আধিকারিকরা তেমনভাবে সন্তুষ্ট নন। সঙ্গে এও জানা গেছে, সায়নীর ফ্ল্যাট নিয়ে প্রশ্ন করেছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি কুন্তল ঘোষের সঙ্গে তাঁর কীভাবে পরিচয়, প্রশ্ন করা হয় তা নিয়েও। ত্রিপুরার নির্বাচনের প্রচারের টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সায়নী বেশিরভাগে প্রশ্নেরই উত্তর দেননি।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষের মুখেই প্রথম শোনা গিয়েছিল সায়নী ঘোষের নাম। এরপরই নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান সায়নী। তারই রেশ ধরেই তৃণমূলের যুবনেত্রীকে ডেকে পাঠায় ইডি। এদিকে আদপে কুন্তলের সঙ্গে সায়নীর ঘনিষ্ঠতা কতটা বা কুন্তলের হাত ধরে কতটা লাভবান হয়েছেন তিনি তা নিয়ে শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘এটা তো তদন্তের বিষয়। যদি লাভ করে থাকি তাহলে সেটা তো বেরিয়ে আসবে। যদি কোনও লাভ না পাই সেটাও বেরিয়ে আসবে।‘ এদিকে ইডি সূত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। সূত্রের খবর, ইডির তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে সায়নী ও কুন্তলের বেশ কিছু চ্যাট। আগামীর তদন্তে যেগুলিই বড় হাতিয়ার হতে চলেছে তদন্তকারীদের। যদিও এদিন কুন্তলের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন প্রসঙ্গ উঠতেই কার্যত মেজাজ হারাতে দেখা যায় সায়নীকে। শোনা যাচ্ছে যে সময়ে কুন্তলের সঙ্গে সায়নীর আর্থিক লেনদেন হয়েছে সেই সময়েই নাকি নিয়োগ দুর্নীতি সবথেকে বড় আকার নিয়েছিল। এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই ইডির স্ক্যানারে রয়েছে সায়নীর যাবতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি, সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য, আয়কর রিটার্ন। এই সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি-ই শুক্রবারই সায়নীকে নিয়ে যেতে বলেছিলেন ইডির আধিকারিকরা।
এদিকে পঞ্চায়েত ভোটের শেষবেলার প্রচারে যখন ব্যস্ত সব রাজনৈতিক দলের তাবড় নেতারা ঠিক সেই সময় শনিবার দলের ‘প্রচারক’দের যে তালিকা সামনে আনা হয়, সেখানে ১৬ জন দলীয় মুখের মাঝে নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি সায়নীর। এর আগে শুক্রবারও প্রচারক হিসাবে নাম ছিল না তাঁর। অথচ এর আগে তৃণমূলের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষও ইতিমধ্যেই একাধিক জেলায় প্রচার সেরেছেন। তবে প্রচারের তালিকায় তার নাম না থাকা প্রসঙ্গে তিনি নিজেই জানান, ‘আমি যুব সভানেত্রী। আমি প্রচারে যাব না? আমি শিডিউলটা করছি। প্রচার মানে তো অনেকটা দূরত্বেরও ব্যাপার আছে। এটা তো আর কলকাতার ভোট না। সবটাই দেখা যাচ্ছে। তবে অবশ্যই প্রচারে যেতেই হবে। আমি এক দু’দিনের মধ্যেই প্রচারে যাব। অনেকগুলো কর্মসূচি আছে। প্রচুর মানুষ আসেন একটা রোড শোয়ে। ফলে আয়োজন করতে সময় লাগে। সবাই ফোন করছে, ডাকছে সারাক্ষণ। আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চেষ্টা করছি।‘
এদিকে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, ‘১১ ঘণ্টা টানা ইডির জিজ্ঞাসাবাদ। কিছুটা হলেও ক্লান্ত সায়নী। সে কথা মাথায় রেখেই হয়ত তাঁকে এদিনের প্রচার থেকে বিরত রাখা হয়েছে।‘