পদ থেকে অপসারণের পর তারকা প্রচার তালিকা থেকে বাদ কুণাল, পাশে দাঁড়ালেন শান্তনু

পদ থেকে অপসারণের পর এবার তৃণমূলের তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে বাদ গেল কুণাল ঘোষের নাম। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তরফ থেকে পঞ্চম দফার তালিকায় ৪০ জন তারকা প্রচারকের নাম সামনে আনা হয়। সেখানে নেই কুণাল ঘোষের নাম। প্রসঙ্গত, বুধবারই কুণালকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। এই অপসারণের পর বৃহস্পতিবার  সামনে আসে দলের স্টার ক্যাম্পেনারদের তালিকা। যেখানে নাম রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ৪০ জন হেভিওয়েটের।

গোটা ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। ওইদিন একটি রক্তদান শিবিরে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় কুণালের। সেখানে ‘জনপ্রতিনিধি’ হিসেবে তাপসের ঢালাও প্রশংসা করতে শোনা যায় কুণালকে। আর সেই ঘটনাকে ঘিরেই তোলপাড় হয় বঙ্গ রাজনীতি। প্রথমে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কুণালকে। পরে তৃণমূলের তারকা প্রচারকের তালিকাকেও তাঁর নাম রাখা হয়নি।

এরপর তৃণমূলের তরফ থেকে য়ে বিবৃতি জারি করা হয় তাতে এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের তরফে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তাতে জানানো হয় যে, কুণালকে আগেই মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর এবার তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হল। সেই বিবৃতিতেই আরও বলা হয়েছে, কুণালের বক্তব্যকে যেন ‘দলের বক্তব্য’ হিসেবে ধরা না হয়। এমনকী কোনও সংবাদমাধ্যম যদি এমন কিছু করে, তা হলে তাদেরকেও আইনি ব্যবস্থার মুখে পড়তে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

কুণালের অপসারণের পর থেকেই তা নিয়ে তীব্র চাপানউতোর চলছে বঙ্গ রাজনীতিতে। এই ইস্যুতে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তো জেলে।‘ আর এখানেই সুজনের প্রশ্ন, এরপরও তাঁকে দল থেকে বাতিল করা হয়েছে কি না তা নিয়ে। সঙ্গে এও জানান, ‘এ সব এখন তৃণমূলের বাহানা। যত বড় অপরাধী তত বড় তৃণমূল নেতা। গোটা তৃণমূল দেখলে তাই বোঝা যায়।’

একইসঙ্গে এই ইস্যুতে আক্রমণ করা হয় পদ্ম শিবির থেকেও। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান, কেউ কেউ বলছেন মানিকতলার নির্বাচন করে কেন্দ্র করে যে অভ্যন্তরীণ রসায়ন তৈরি হয়েছিল তার ফলাফল এটা। তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কুণাল ঘোষের সরে যাওয়া নিয়ে আমাদের খুব একটা উৎসাহ নেই। তবে বিরোধী শিবির থেকে যে ভাষাতেই কটাক্ষ করা হোক না কেন, কুণালের হয়ে ব্যাট ধরতে দেখা গেল প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনকে। তিনি জানান, একটা-দুটো মন্তব্যের জন্য কোনওভাবেই কুণালের দলের প্রতি এতদিনের অবদান অস্বীকার করা যায় না। বলেন, ‘নির্বাচনের সময় এমন কিছু কথা বলে আমাদের দলের প্রার্থীকে বিব্রত করে থাকেন তার জন্য দল নিশ্চিত করে পদক্ষেপ করেছে। আমার কিছু বলার নেই। আমার পাশাপাশি কোনও একটা মানুষের এক দুদিনের মন্তব্যের জন্য তাঁর অতীতের যে দলের প্রতি যে অবদান সেটা কিন্তু হঠাৎ শূন্য হয়ে যায় না।’ শান্তনুর আরও সংযোজন, “বিগত কয়েক বছরে দল যখন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছে তখন শান্তনু সেন বা কুণাল ঘোষ, আমাদের মতো হাতেগোনা কয়েকজন আগু-পিছু না ভেবে দলের হয়ে বলে গিয়েছি, দলকে ডিফেন্ড করে গেছি। বিরোধীদের চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছি।”

এদিকে বৃহস্পতিবার কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে জানান, যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা মহান ব্যক্তি। মহানুভব। ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুক। আমি তৃণমূলের একজন সাধারণ কর্মী, সাধারণ সৈনিক থেকে যাওয়ারই চেষ্টা করব।’ সঙ্গে এ বার্তাও দেন, ‘পদ নয় পথে আছি।’ যেখানে রাস্তা, যেখানে দেওয়ার লিখনের কর্মীরা, তাঁদের সঙ্গে আছি। একদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তা অনুধাবন করবেন, এই আশা রেখে দলটা চালিয়ে যাব।’ এরই পাশাপাশিকর্মীদের সঙ্গে তিনি আছেন বলেও জানিয়ে দেন কুণাল। কর্মীদের পাশে পেয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলতে দেখা যায় কুণাল ঘোষকে। অন্যদিকে কুণালকে ঘিরে ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগানও দিতে দেখা যায় কর্মীদেরও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 7 =