মিলল আরও একটি ডায়েরি, ঘনাচ্ছে রহস্যের জট

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মিলেছে আরও একটি ডায়েরি, অন্তত এমনটাই খবর কলকাতা পুলিশ সূত্রে। ফলে আগে উদ্ধার হওয়া ডায়েরি এবং এবং গত ১২ আগাস্ট উদ্ধার হওয়া এই জোড়া ডায়েরি ঘিরে রহস্য যেন আরও জট পাকাচ্ছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর গত ১২ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় দ্বিতীয় ডায়েরিটি। ধূসর রঙের ওই ডায়েরির উপর লেখা রয়েছে, ‘গাজনা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি’। বৃহস্পতিবার পুলিশ সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই ডায়েরির ১৫১ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে চিঠি। ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়ের উদ্দেশে লেখা ১০ অগাস্ট লেখা হয়েছিল ওই চিঠি। ধৃত পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত জেরায় দাবি করেছেন, চিঠিটি তাঁর লেখা। মৃত ছাত্রের হয়ে দীপশেখরই চিঠিটি লিখেছিলেন। এর আগে গত ১০ অগাস্ট হস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল প্রথম ডায়েরি। ওই ডায়েরিটি ছিল হলুদ রঙের।

ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট নয় জনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। জেরায় এক পড়ুয়া চিঠির কথা তোলেন। সেই চিঠি কোথায় রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে গিয়েই দ্বিতীয় ডায়েরির হদিস পান তদন্তকারীরা। মেন হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে তল্লাশি অভিযানে ওই ডায়েরিটি উদ্ধার করা হয়। হস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘর থেকে যে ডায়েরিটি উদ্ধার করা হয়েছিল, তাতে তেমন কিছু মেলেনি বলেই দাবি তদন্তকারীদের।

প্রসঙ্গত, তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে থাকতেন ধৃত পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ। ওই ঘরেই গত ৯ অগস্ট রাত ৯টার পর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নির্যাতিত ছাত্রকে। সেখানে চিঠি লেখানোর পরিকল্পনা করেছিলেন যাদবপুরকাণ্ডে প্রথম ধৃত সৌরভ চৌধুরী এবং ধৃত সপ্তক কামিল্যা। যদিও সৌরভ দাবি করেছিলেন, চিঠি লেখার সময় তিনি ছিলেন না। তদন্তকারীদের দাবি, চিঠির ছবি তুলে এক জনকে তা পাঠিয়েছিলেন সৌরভ।

প্রসঙ্গত, গত ৯ অগাস্ট ১০ অগাস্ট ভোরে নদিয়ার বাসিন্দা বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যু হয়। র‌্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে এফআইআর করে এই এফআইআর হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১০ অগাস্ট ৬৮ নম্বর ঘরে তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ। কারণ, হস্টেলে ওই ঘরেই থাকতেন নির্যাতিত ছাত্র। সেখান থেকে ডায়েরি উদ্ধার হলেও তাতে কিছু পাননি তদন্তকারীরা। এরপর যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় সৌরভকে। তাঁকে জেরাপর্বে চিঠির বিষয়টি উঠে আসে। সেই চিঠির সূত্র ধরেই গত ১২ অগাস্ট রাতে ওই ১০৪ নম্বর ঘরে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তারপরই উদ্ধার করা হয় দ্বিতীয় ডায়েরি। ডায়েরির ১৫১ নম্বর পাতায় ওই চিঠির উল্লেখ রয়েছে।

এদিকে যে চিঠি সামনে এসেছে সেই চিঠিতে হাতের লেখা মৃত ছাত্রের কি না, স্বাক্ষর তার না কি অন্য কারও, তা নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তার মধ্যেই ওই ডায়েরিরই একটি পাতা জুড়ে একাধিক স্বাক্ষর তদন্তকারীদের নজরে এসেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই স্বাক্ষর মৃত ছাত্রের নামেই। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হচ্ছে, কেউ যেন সেই স্বাক্ষরের অনুশীলন চালিয়েছেন। আর এখানেই রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। জেরায় ধৃত দীপশেখর দাবি করেছেন, মৃত ছাত্রের হয়ে তিনিই চিঠিটি লিখেছিলেন। সেই চিঠি হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। পেয়েছেন জোড়া ডায়েরি। এখন এই জোড়া ডায়েরিই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 3 =