সোমবারের কোচবিহারের সভার পর মঙ্গলবার সভা ছিল জলপাইগুড়িতে। সোমবার যেখানে শেষ করেছিলেন মঙ্গলবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিনের সভায় বক্তব্য রাখার শুরু থেকেই মমতা আক্রমণ শানান কেন্দ্রের মোদি সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে। এদিন বিজেপির ভবিষ্যত নিয়ে তিনি জানান, ‘বিজেপির আয়ু মাত্র ৬ মাস। মোদি আজ আছেন, কাল চলে যাবেন। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি,মার্চ মাসে লোকসভা ভোট। আমি যদি ভারতবর্ষকে চিনি, বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।’ একইসঙ্গে মমতার সংযোজন, বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্বকেও কার্যত দুরমুশ করে দেন মমতা। তৃণমূল সুপ্রিমোর দাবি, ডবল ইঞ্জিনের একটা ফুটো হবে পঞ্চায়েত ভোটে আর তারপর দ্বিতীয় ফুটো হবে লোকসভা ভোটে।‘ এরই রেশ ধরে মুখ্য়মন্ত্রী এও জানান, ‘আগামী দিনে নরেন্দ্র মোদিকে সরানোর শপথ নেওয়ার দিন। আমরা জোট করব। কিন্তু এখানে বিজেপি কংগ্রেস সিপিআইএম যে ভাবে কাজ করছে তাদের মুখ ভোঁতা করে দেব আমরা।’ একইসঙ্গে সাবাধানবাণী, ‘মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে নেই।‘ একইসঙ্গে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে।
তবে এখানে একটা কথা বলতেই হয়। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বাংলার পঞ্চায়েত ভোট অনেকটা লিটমাস টেস্টের মতো। অন্তত বাংলার রাজনীতির নিরিখে তো বটেই। আর তাই পঞ্চায়েতের প্রচারের সামনে আসছে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের কথা। অন্তত বঙ্গ রাজনীতির প্রেক্ষিতে ২০২৪-কে মেগা ফাইনাল ধরা হলে পঞ্চায়েত নিঃসন্দেহে সেমিফাইনাল।
সোমবারও কোচবিহারের সভা থেকেও মমতা আক্রমণ শানিয়েছিলেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। বেশ প্রত্যয়ের সুরে বলেছিলেন, শীঘ্রই কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠিত হবে। উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন মধ্যপ্রদেশে বিজেপির এক কর্মিসভা থেকে তৃণমূল শিবিরকে তুলোধনা করেন দুর্নীতির ইস্যুতে। গরু পাচার, কয়লা পাচার, শিক্ষা থেকে শুরু করে রাজ্যে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের কথা এদিন উঠে আসে নরেন্দ্র মোদির কথায়।
এদিকে এদিন জলপাইগুড়ির সভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে একাধিক ইস্যুতে তোপ দাগতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন, ‘আমি বাংলার বাড়ি করে দেব। টাকা এলে করে দেব। আমি কথা দিচ্ছি। কাউকে এক পয়সা দেবেন না। কেউ যদি বলে আমাকে পয়সা দাও বলবেন দিদি কে বলে দেব। আমরা চাই মানুষের কাজ মানুষ করুক।‘ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নের ছলে জানতে , ‘তৃণমূল কোথায় হারবে?’ এরপরই প্রত্যয়ের সুরে জানান, ‘তৃণমূল সব জায়গায় জিতবে। কার ক্ষমতা আছে তৃণমূলকে হারানোর। কোনও কোনও বিজেপি নেতা বলছেন, তৃণমূলকে ভোট দিলে ইডি, সিবিআইকে দেব। কিছুই করতে পারবে না।‘ তবে এদিনের বক্তব্যেও মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন, ১০০ দিনের কাজের কেন্দ্র থেকে টাকা বাকি থাকার ইস্যু। এরই সূত্র ধরে হুঁশিয়ারির সুরে জানান, ‘১০০ দিনের যে টাকা আমরা পায়নি সেই টাকা আমরা ছিনিয়ে আনবই।‘
মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলায় প্রচারে গিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে স্কুলের পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনকারীদের কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বক্তৃতার মাঝে সহেলির নাম উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো কথাও বলেন তিনি। পাশাপাশি জানান, উত্তরবঙ্গের জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। রাজবংশী ভাষায় এখন পড়াশোনা করা হচ্ছে। সান্ত্রি ভাষা নিয়েও পড়াশোনা করা যায়, উন্নতি করা যায় সে ব্যাপারেও ভাবনা চিন্তা হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তবে এদিনের জলপাইগুড়ির সভা থেকে গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের খারাপ ফলাফলের কথাও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মনে করিয়ে দিতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে।