কলকাতা হাইকোর্টের হকার উচ্ছেদের নির্দেশ নিয়ে শাঁখের করাত-এ কলকাতা পুরসভা

কলকাতা শহরে হকার সমস্যা দীর্ঘকালের। এবার হকারদের নিয়ে বেশ বেকায়দায় কলকাতা পুরসভা। কারণ, সম্প্রতি কলকাতা শহরের একাধিক জায়গা থেকে হকার তোলার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। অন্যথায় পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞনমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। এদিকে এই নির্দেশ আদৌ কার্যকর করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে পুরকর্তাদের মনেই। তাঁদের যুক্তি, কোনও হকারকেই ফুটপাথ থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না বলে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। হকারদের জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য নতুন আইন তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই হকার উচ্ছেদ করা মানে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অমান্য করা। ফলে ‘শাঁখের করাতে’ এখন কলকাতা পুরসভার আধিকারিকরা।

পুরসভা সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি শহরের মোট তিনটি জায়গা থেকে পুরসভাকে হকার সরানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এর মধ্যে রয়েছে মল্লিকবাজার, বেহালার ৬ নম্বর ডায়মন্ডহারবার রোড এবং খিদিরপুরের ৫ নম্বর ডেন্ট মিশন রোড। মূলত রাস্তা ও ফুটপাথকে দখল মুক্ত করতেই এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ নিয়ে মামলাও দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। তার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশে কোন দিকে যাবেন পুরকর্তারা তা বুঝে উঠতে পারছেন না।

কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ সদস্য দেবব্রত মজুমদার অবশ্য জানিয়েছেন, ‘হাইকোর্ট কয়েকটা জায়গা থেকে হকার সরানোর কথা বললেও পুরসভার পক্ষে সেই কাজটা করা কঠিন। কারণ, হকাররা কোথায় বসবে সেটা ঠিক করে টাউন ভেন্ডিং কমিটি। যদি দেখা যায় কোথাও হকাররা বেআইনি ভাবে পুরো ফুটপাথ দখল করে বসে রয়েছে সেক্ষেত্রে কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’ এদিকে আবার

সুপ্রিম কোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে পুরবোর্ডের কর্তারা হকার উচ্ছেদে সায় না দিলেও কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে একেবারে উপেক্ষা করতেও পারছে না তাঁরা। তার কারণ, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করলে আদালত অবমাননার দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন পুরকর্তারা। সে কথা মাথায় রেখেই ওই সব জায়গা থেকে হকার সরানোর জন্য স্থানীয় বরো একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও এ দায়িত্ব নিতে নারাজ একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররাই। এক বরো একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘আদালতের হাত থেকে বাঁচতে কর্তৃপক্ষ আমাদের ঘাড়ে বন্দুক রাখা হচ্ছে। শহরের কোনও জায়গা থেকে হকার সরাতে গেলেই প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। ফলে এই কাজটা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’

এদিকে হকার সংগ্রাম কমিটির নেতা শক্তিমান ঘোষ জানান, ‘কোথায় হকার বসবে আর কোথায় বসবে না, সেটা টাউন ভেন্ডিং কমিটি ঠিক করে। এখন কোনও হকারকে উচ্ছেদ করাটা বেআইনি। সেটা হলে সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা করা হবে। আমরা কলকাতা হাইকোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানাবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − nineteen =