বেহালার পথ দুর্ঘটনার জেরে জনসংযোগ রক্ষায় জোর কলকাতা পুলিশের

বেহালা দুর্ঘটনার জেরে এবার শহরের বিভিন্ন স্কুলের সামনে ঢেলে সাজানো হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। তার সঙ্গেই এ বার স্কুলে স্কুলে জনসংযোগ বাড়ানোর কাজ শুরু করল কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আর এই জনসংযোগের ক্ষেত্রে এবার পড়ুয়াদেরও পাঠ দিচ্ছে পুলিশ। তাতে রয়েছে রাস্তায় বেরোলে কী ভাবে রাস্তা পারাপার করতে হবে,গাড়িতে সিট বেল্ট ব্যবহার থেকে অযথা হর্ন না বাজানো,বাইকে হেলমেট ব্যবহার থেকে বেপরোয়া যাতে গাড়ি না চালানো,এই বিষয়গুলো নিয়েই পাঠ দেওয়া হচ্ছে স্কুল পড়ুয়াদের। একইসঙ্গে তাদের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছেও বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছে কলকাতা পুলিশ।
বুধবার দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি স্কুলের সামনে পড়ুয়াদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল সাউথ ট্রাফিক গার্ডের তরফে। সেখানে যান চলাচল থেকে পথচারীর রাস্তা পারাপারে কতটা সতর্ক থাকা উচিত, তা নিয়ে শেখানো হয় পড়ুয়াদের। একইসঙ্গে তাদের বলা হয় নিজেদের পরিবারের সদস্য আত্মীয় সকলকে এই সচেতনতামূলক আলোচনা জানাতে হবে।
কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দেবাশিষ ঘোষ জানান,‘শুধুমাত্র পড়ুয়াদের নয়, এই সচেতনা শিবিরগুলির মাধ্যমে পড়ুয়াদের অভিভাবক,বন্ধুদের কাছেও আমরা বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছি৷ পাশাপাশি, কেবল মাত্র ট্রাফিক নিরাপত্তা সপ্তাহ জুড়ে এই কাজ হবে, এমনটাও নয়, লাগাতার বিভিন্ন স্কুলে ট্রাফিক নিরাপত্তা বিষয়ক, ট্রাফিক আইনের সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালাও আমরা চালাবো৷’
এরই পাশাপাশি পথ দুর্ঘটনা এড়াতে আরও এক পক্ষেপের ভাবনা কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের। শহরজুড়ে আরও ৭৫টিরও বেশি পেডেস্ট্রিয়ান আইল্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। প্রাথমিকভাবে যে সমস্ত স্কুলের কাছে খুব বেশি ক্রসওভার বা রাস্তা পারাপারের বিষয় রয়েছে,সেই সমস্ত জায়গায় এগুলি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছ। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই লালবাজারের তরফে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি আপাতত কেএমসি-র অনুমোদন সাপেক্ষ।
এদিকে পুলিশ জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই প্রায় ২০টি এই ধরণের পেডেস্ট্রিয়ান আইল্যান্ড রয়েছে। যেগুলির মধ্যে অন্যতম পার্ক স্ট্রিট, ডোরিনা ক্রসিং ও হেস্টিংস ক্রসিংয়ের আইল্যান্ডগুলি। এছাড়া চিহ্নিত করা নতুন জায়গাগুলি হল কেভি স্কুল ও বাবুঘাটের কাছে এবং ক্যাথেড্রাল রোডে। পাশাপাশি ট্র্যাফিক গার্ডরা যে সমস্ত জায়গা উল্লেখ করেন,তার মধ্যে ২টি অবস্থিত ডিএইচ রোডে। এই বিষয়ে এক কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, লালবাজার এখন সুপারিশগুলি চূড়ান্ত করবে এবং কেএমসি-তে পাঠানোর আগে তালিকাটি আরও ছোট করা হতে পারে।
এছাড়ও যে সমস্ত জায়গার জন্য প্রস্তাব এসেছে সেগুলি হল, হেমন্ত বসু সরণী ও বিবাদী বাগ, সি আর অ্যাভিনিউ ও এমজি রোড, জেএম অ্যাভিনিউ-শ্যামবাজার স্ট্রিট, মিন্টো পার্ক-শরৎ বোস রোড ক্রসিং, এজেসি বো রোড-পিটিএস-এর কাছে ডি এল খান রোড, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের সামনে এপিসি রোড-অরবিন্দ রোড ক্রসিং, ইএম বাইপাস-বাগমারি রোড, বাইপাস-বেঙ্গল কেমিক্যাল ক্রসিং, ফুলবাগান ক্রসিং, জেমস লং সরণী-এন এন রায় রোড ক্রসিং, রুবি ক্রসিং ও বাইপাস-টেগর পার্ক।
এই প্রসঙ্গে এক আধিকারিক বলেন, ‘যে সমস্ত ক্রসিংয়ে প্রচুর পরিমান পথচারী থাকেন, তাঁদের বিষয়টা আমার প্রথমে সুনিশ্চিত করতে চাইছি।’ তিনি আরও জানান, ‘সিগনাল সবুজ হয়ে গেলে কারও যাতে অবস্থা বেহালার সৌরনীল সরকারের মতো না হয়, সেই বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 3 =