মানিকের বিরুদ্ধে ১০০ পাতার এফআইআর, বুধবার টানা ৬ ঘণ্টার জেরা সিবিআইয়ের

মঙ্গলবার রাতেই মানিকের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ পাতার এফআইআর দাখিল করেছে সিবিআই। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৪৬৭ (নথি জাল করা, নকল নথি বানানো), ৪৬৮ (জালিয়াতি) নম্বর ধারায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৭, ৭এ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, জেরায় অসহযোগিতা করেছেন অভিযুক্ত। যদিও প্রাক্তন পর্ষদ সচিব রত্না বাগচির বয়ান ও একাধিক নথি ও তদন্তে উঠে আসা তথ্যকে হাতিয়ার করে শিক্ষক নিয়োগের পোস্টিংয়ে দুর্নীতির অভিযোগে এই ১০০ পাতার চার্জশিট দায়ের করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা।

এদিকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে জোড়া জিজ্ঞাসাবাদের মুখে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার সন্ধে থেকে রাত ১২টা অবধি প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। ফের বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ম্যারাথন জেরা। শুধু নিয়োগে নয়, এবার নিয়োগের পর পোস্টিংয়েও টাকার বিনিময় ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে বীরভূম, মুশিদাবাদ, বাঁকুড়া, হুগলির এক শিক্ষকের করা মামলায় সামনে আসে আরও বড় দুর্নীতি চক্র। মামলাকারী শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই ২০২০ সালের শিক্ষক নিয়োগে বীরভূমে আসন নিয়ে সামনে আসে দুর্নীতি। প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সেখানে জেনারেল ক্যাটাগরিতে ছিল শূন্যপদ। কিন্তু মেধাতালিকা প্রকাশের পর জানানো হয় সেখানে শূন্যপদ নেই। সেই জেলার জেনারল ক্যাটেগরির চাকরিপ্রার্থীদের অন্য জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে অনেককেই দূরের জেলায় চাকরি নিয়ে হয়। এদিকে ২৩ দিনের মাথায় ফের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয় ওই জেলায় জেনারেলেই রয়েছে শূন্যপদ। অভিযোগ, মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীদের নির্বাচিত কয়েকজনের কাছে টাকার বিনিময়ে সুবিধাজনক পোস্টিং বিক্রয় করা হয়। এই অভিযোগ শুনে বিস্মিত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, পরিকল্পিত দুর্নীতি হয়েছে পোস্টিংয়েও। টাকার বিনিময়ে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণদের কাছে বিক্রি হয়েছে আসন। এরপরই বিষয়টি ফেলে না রেখে রাতারাতি ইডি ও সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মতোই জেরার পর ষড়যন্ত্র, তথ্যে কারচুপি, প্রতারণা জাল নথি ব্যবহার সমস্ত কিছুর অভিযোগে এফআইআর করে সিবিআই। দুর্নীতি দমনের ৭, ৭এ, ৮ ধারাতে অভিযোগ দায়ের বলে সূত্রের খবর। এই কাণ্ডকেই ডিজাইনড কোরাপশন বলে অভিহিত করেন বিচারপতি।

এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার রাত থেকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় তাঁকে। বুধবার আদালতে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট তুলে ধরে সিবিআই। কেন্দ্রীয় সংস্থার এই কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘আমাদের সরকারি আধিকারিকরা অন্তত দক্ষ। ধন্যবাদ ভাল কাজের জন্য।’ এদিকে প্রাথমিকে পোস্টিং সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে যে মামলা হয়েছিল বুধবার সেই মামলার শুনানিতে সিবিআই জানায়, বুধবারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে মানিকের। ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে সিবিআই জানিয়েছে, মানিক অনেক কিছুই বলেছেন। আবার অনেক কিছু মনে নেই বলেও জানিয়েছেন পলাশীপাড়ার বিধায়ক। যে ৪০০ জন এক্ষেত্রে সুবিধা পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে, পর্ষদের কাছে তাদের তালিকা চেয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার ৩৪৪ জন প্রার্থীর নাম, ঠিকানা সহ সব তথ্য দিয়েছে পর্ষদ। বাকিদের তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। পর্ষদ জানিয়েছে, এরা প্রত্যেকেই পোস্টিং-এর নয়া তালিকায় নিযুক্ত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিচারপতি বলেছিলেন, সিবিআই সঠিকভাবে তদন্ত না করলে তাঁকেও অন্য পথ ভাবতে হবে। প্রয়োজনে সিবিআই-এর ডিরেক্টরকে ডেকে পাঠাবেন, প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন বলেও উল্লেখ করেছিলেন বিচারপতি। এদিকে, সওয়াল করতে গিয়ে এদিন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘এসএসসি হাইকোর্টে ভাল আচরণ করে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে তাদের আচরণ অন্যরকম।’ একথা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘সেটা যে আমার চোখ এড়িয়ে গিয়েছে তা নয়। এর জন্য চেয়ারম্যানকে ডাকব ভাবছি। জানতে চাইব কেন এমন করছে এসএসসি। লড়াই সবে শুরু হয়েছে। আরও বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − nine =