বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে মুষ্টিমেয় লোককে ডিএ দিচ্ছে কেন্দ্র: মমতা

রাজ্য সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিএ ইস্য়ু। কারণ, শহরের রাস্তায় এখনও বসে রয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না এই যুক্তি দেখিয়েও আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে পারছে না রাজ্য। আর এই প্রসঙ্গই এবার উঠে এল ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা থেকে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়ে জানান,কেন কেন্দ্রীয় সরকার সরকারি কর্মীদের ডিএ দিচ্ছে তা নিয়েও। আর এখানেই মমতার বক্তব্য,মুষ্টিমেয় কিছু লোকজনকে সন্তুষ্ট করার জন্যই সময়ে সময়ে মহার্ঘ ভাতা বাড়ায় কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য সরকার সবাইকে নিয়ে চলতে চায় বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, ডিএ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রথম থেকেই রাজ্যের যুক্তি হল,রাজ্যের ভাঁড়ারে ডিএ বাড়ানোর মতো টাকা নেই। বুধবার ঝাড়গ্রামে গিয়ে মমতা বলেন,’কোনও টাকা নেই। শুধু ভোট এলেই সরকারি কর্মীদের ডিএ বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্র। এতে এক শ্রেণির মানুষকে খুশি করা যায়।’ এই প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি আর রাজ্য় সরকারের চাকরির আলাদা পলিসি বা নীতি আছে। কেন্দ্রের হাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আছে। এটা বুঝতে হবে।’
মহার্ঘ ভাতা ইস্যুতে কেন্দ্রকে নিশানা করে মমতা এদিন এও বলেন,’রাস্তার টাকা,আবাসের টাকা দিচ্ছে না। মুষ্টিমেয় কিছু লোককে ডিএ দিচ্ছে। ওপর মহলের লোককে খুশি করার চেষ্টা করছে যাতে নীচুতলার মানুষকে শোষণ করা যায়। আমরা চাই সবাইকে টাকা দিতে।’
এদিকে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে, যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁরা চান, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিক রাজ্য সরকার। এই প্রশ্নে রাজ্য বারবারই বুঝিয়েছে যে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি,যে সব খাতে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে দাবি করছে রাজ্য,সেই সব খাত থেকে ডিএ-র টাকা মেটানো হয় না।
এদিকে এদিনের সভা থেকে সোমাবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে যে  সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ছে তা ঘিরে অনেকে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলেও অনুযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ঝাড়গ্রামে মঞ্চ থেকে সবিস্তারে তিনি তিন ভাষার ফর্মূলা বুঝিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, সোমবার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে নয়া শিক্ষা নীতি প্রবর্তনের কথা হয়েছে। সেই অনুযায়ী রাজ্যের সরকারি বেসরকারি সব স্কুলে বাংলা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। এই সিদ্ধান্তকে নিয়ে অনেকেই বাংলা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে রটনা ছড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বিভ্রান্তি দূর করতে তিনি স্পষ্ট জানান,’সরকার তিনটি ভাষার কথা বলছে। তাতে মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা থাকবে এক নম্বরে। বাকি দ্বিতীয়, তৃতীয় ভাষার জায়গায় যার যা পছন্দ সে তাই রাখবে। যে হিন্দি পড়তে চায়, যে রাজবংশী পড়তে চায়, সে এই ভাবে পড়বে। অর্থাৎ যাঁরা বাংলা মিডিয়ামে পড়ে তাঁদের প্রথম ভাষা বাংলা। আর দুটো তাঁরা যে কোনও ভাষা নিতে পারে। ইংরেজি,হিন্দি,নেপালি,গুরুমুখিসহ সবই বিকল্প হিসেবে পাওয়া যাবে।’ শুধু মনে রাখতে হবে ‘তিন ভাষার ফর্মুলা মাতৃভাষা থাকবে এক নম্বরে। বাকি দুটো বিষয় পড়ুয়ারা নিজেরা বেছে নেবে।’ আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনজাতি কোন ভাষায় কথা বলে তাই দিয়েই প্রথম ভাষার নির্ধারণ হবে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য,’আমার লোকাল ভাষা সবসময়ে এক নম্বরে থাকবে। তাতেই সুবিধা। বাংলায় বেশিরভাগই তো বাংলা মাধ্যম স্কুল। যাঁরা বাংলায় পড়েন,তাঁরা বাংলাই নেবেন।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্ধ করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকেও। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে তুঙ্গে রাজ্য রাজ্যপাল সংঘাত। সেই প্রসঙ্গ এদিন ঝাড়গ্রামের মঞ্চ থেকেও শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। বলেন, ‘মাননীয় গর্ভনর সাহেব কালো চশমা পড়ে জ্ঞান দিয়ে বেড়াচ্ছেন। সে ওঁর ইচ্ছে, উনি একটার জায়গায় দশটা সানগ্লাস পরতে পারেন । কিন্তু উনি যা খুশি তাই করতে পারেন না। ওঁর কাজ সংবিধানে লেখা রয়েছে। তাঁর বাইরে বেরিয়ে উনি কিছু করতে পারেন না। এখন বলছেন মুখ্যমন্ত্রী যা করবে, উনিও তাই করবেন। তা করতে হলে আগে দল তৈরি করে নির্বাচনে জিতে আসুন। ১০০ বছরেও পারবেন না। এখানে যা খুশি তাই করা যায় না।’
এখানেই শেষ নয়,উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপালকে বিঁধে তিনি জানান, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছি। আর উনি দালালি করে আটকে দিচ্ছেন। যাঁকে খুশি উপাচার্য করে দিচ্ছেন। উপাচার্য করতে গেলে অন্তত তিনটে নাম পাঠাতে হয়। ১০ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কেরালার নিজের লোককে এনে এখানে বসিয়ে দিয়েছে। কেরালার অনেক লোক এখানে থাকেন, যারা আমার পরিচিত। আমি যাদের ভালোবাসি। কেরালা বাসিন্দা নিয়ে আপত্তি নয়। এমন একজনকে বসাচ্ছেন। যার কোনও অভিজ্ঞতা নেই শিক্ষা ক্ষেত্রে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করেছেন এমন একজনকে তিনি একজন আইপিএস। ওঁর ঘনিষ্ঠ। আমার আপত্তি সেখানে।’
মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করার বিল ফেলে রাখা নিয়েও নিশানা করেন মমতা। বলেন,’বিধানসভায় বিল পাস হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারপার্সন হবেন। সৎ সাহস থাকলে আপনি ওই বিল ছেড়ে দিন! ইংরেজ আমলে যখন আইন ছিল, দেশে রাজ্যে সেই সময় মোটে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এখন তা বেড়ে ৪৪-৪৫টি হয়েছে। বিল না ছেড়ে রাজভবনে ছাত্রছাত্রীদের রাজভবনে ডেকে বলবেন, দাঙ্গা কাকে বলে, দুর্নীতি কাকে বলে। এটা কি রাজ্যপালের কাজ? নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে হলে বিজেপির হয়ে দাঁড়ান।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + ten =