সাত সকালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বেহালায় লরির ধাক্কায় মৃত্যু ৮ বছরের সৌরনীলের। এই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবা বছর ৫৭-র সরোজ কুমার সরকার। স্থানীয় সূত্রে খবর, বেহালার চৌরাস্তার কাছে বড়িশা স্কুলের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে শুক্রবার সকালে। সঙ্গে এও জানা গিয়েছে, স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সৌরনীল। যাওয়ার পথে এক লরির বেপরোয়া গতির বলি হতে হয় তাঁক। এই ঘটনায় আহত হন তাঁর বাবা। এই ঘটনার পরই সৌরনীলকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় বিদ্যাসাগর হাসাপাতালে। তবে চিকিৎসকেরা সৌরনীলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিকে সরোজবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম-এ। পুলিশ সূত্রে খবর, এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন তিনি। এদিকে এই ঘটনার পৎই ঘটনাস্থল থেকে পালায় লরিটি। পরে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে এই গাড়িটির সন্ধান মেলে। এরপরই ঠাকুরপুকুর থানায় নিয়ে আসা হয় গাড়িটিকে।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রে চেহারা নেয় বেহালা চৌরাস্তা। তার জেরে ডায়মন্ড হারবার রোড সহ আশপাশের সবকটি রাস্তাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় একের পর এক পুলিশের গাড়িতে। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। প্রথমে পুলিশ ভ্যান ও পরে বাইকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, ভাঙচুর চালানো হয় বাসে। উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। নামানো হয় র্যাফ। কাঁদানে গ্যাসের সেল ছুড়েও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে হয় পুলিশকে।
এদিকে লালবাজার সূত্রে খবর, এদিন ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আধিকারিকদের লক্ষ্য করে যে ইট ছোড়া হয় তাতে আহত হন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার রূপেশ কুমার সহ ৫ পুলিশকর্মী। লালবাজার সূত্রে খবর, রূপেশ কুমারের মাথা ফেটে গিয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। তাঁর সিটি স্ক্যান করা হবে বলে জানা গিয়েছে। বেলা বাড়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে বেহালা চৌরাস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এমন একটি দুর্ঘটনায় পুলিশের দিকেই আঙুল তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ঘটনার পর পরই স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন এলাকার মানুষ ও বড়িশা স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। স্কুলের সামনে পড়ুয়াদের সুরক্ষা কোথায়, এই প্রশ্ন তুলেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই রাস্তায় ট্রাফিকের কোনও নিয়ম মানা হয় না, সে দিকে কোন নজরই নেই পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে গাড়ি চালকদের টাকা নেওয়ার বিস্ফোরক অভিযোগও জানাচ্ছেন তাঁরা। সোজা কথায় তোলা তোলার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশ টাকা নেয় বলেই ওই রাস্তা দিয়ে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায় লরি। তার জেরেই এদিনের এই ঘটনা বলে অভিযোগ। সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠে যায়, অন্যান্য সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়েও। তাঁরা বলেন, একদিন নয়, বারবার এমন ঘটনা ঘটছে, তা সত্ত্বেও হুঁশ ফিরছে না পুলিশ প্রশাসনের।
লরির ধাক্কায় শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ও কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ফোন করেন তিনি। নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, পরিস্থিতি কীভাবে এতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। একইসঙ্গে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবারের এই ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুঃখের’ বলে মন্তব্য করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। এদিন ফিরহাদের মুখে শোনা যায় হকার-সমস্যার কথা। ফিরহাদ বলেন, ‘এটা ঠিক যে, কিছু কিছু জায়গায় হঠাৎ করে হকার বসে যাচ্ছে। বার বার বলার পরও তারা সরছে না। পুলিশকে বলব ব্যবস্থা নিতে।’ এ নিয়ে পুলিশকে চিঠিও দিতে চলেছেন মেয়র।
তবে এদিন বেহালার দুর্ঘটনার পর পুলিশের টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ ওঠে সে সম্পর্কে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘যদি অভিযোগ থাকে আপনারা ছবি তুলুন। একটা লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে দিলে হবে না। আমাদের এটাও দেখতে হবে, পুরসংস্থার নিজের পুলিশ নেই। আইনশৃঙ্খলা দেখা পুরসংস্থার হাতে নেই।’