মধ্য়রাতে আরজি কর হাসপাতালের মর্গে হাতাহাতি, ভাঙচুর

রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বেহালার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাণ্ডব। জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের অভিযোগ। নষ্ট প্রচুর ওষুধ থেকে ইনজেকশন। আহত তিনজন নার্সিং কর্মী। সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ঠাকুরপুকুর থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত একজন রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় বেহালার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু, চিকিৎসা শুরু হলেও রোগীকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। রাত ন’টা নাগাদ ডেথ সার্টফিকেট দেওয়ার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় রোগীর পরিবারের।

অভিযোগ, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রায় কয়েকশ দুষ্কৃতী প্রথমে ভিজিটিং গেটে ভাংচুর চালায়, পরে জরুরি বিভাগে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব চালায়। ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে চলে তাণ্ডব। আতঙ্কে বেড ছেড়ে পালিয়ে যান অন্যান্য রোগী এবং রোগী পরিবারের সদস্যরা। মেল অবজার্ভেশন ওয়ার্ডে বেশ কিছু মহিলা ঢুকে যায়। একাধিক ওষুধ, ইনজেকশন নষ্ট হয়ে যায়। নার্সিং কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তিনজন নার্সিং কর্মী আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা চলছে। বাথরুমেও নিয়ে গিয়ে এক নার্সকে মারা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, ছিঁড়ে দেওয়া হয় জামা-কাপড়।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, গুরুতর অবস্থায় রোগীকে নিয়ে আসা হয়েছিল, আমরা খুবই অল্প সময় পেয়েছিলাম, সব রকম চেষ্টা করেছি, কিন্তু ওরা কোনোও কথা শুনতে চায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পর্ণশ্রী থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দিঘা থেকে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে এক যুবক হাসপাতালে ভর্তি হন। যুবকের নাম মেহবুব আলম (২৮)। ভর্তি হওয়ার পর তাঁর বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরকরা। রক্ত পরীক্ষায় হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে। অভিযোগ, রোগীর ইসিজি করার সময় মৃত্যু হয় তাঁর। সূত্রের খবর, ওই যুবক নিয়মিত মদ্যপান করতেন। দিঘা থেকে ফেরা পথে তাঁর পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল বলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। এর কিছু পরে মৃত্যু হয় তাঁর।

এরপরই তাণ্ডব শুরু হাসাপাতাল চত্বরে। হাসপাতাল কর্মীদের দাবি, যুবকের মৃতদেহ গাড়িতে তোলার সময় হাসপাতাল চত্বর জড়ো হয় প্রায় ২০০ জন লোক। রাত প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করে বহিরাগত লোকজন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোগীর পরিজনরা চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে সমস্ত চিকিৎসার নথি চাইতে শুরু করে। তাঁদের জানানো হয়, কোর্ট অর্ডার ছাড়া সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যেই প্রায় দেড়শো লোক এমারজেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে পড়ে। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্মীদের দাবি, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও থানায় খবর দিয়েও লাভ হয়নি। ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালে হামলার সঙ্গে যুক্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 4 =