তথ্যপ্রযুক্তির অফিসকে সামনে রেখে চলছিল আর্থিক প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৪১

সামনে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার অফিস। তার আড়ালে ভুয়ো কলসেন্টার খুলে বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণা করার ঘটনা চলছিল পার্ক স্ট্রিটের ইলিয়ট রোডে। এরপর এই কলসেন্টার থেকে যে টাকা প্রতারণা করে মিলতো তা খাটানো হতো হাওয়ালার কারবারে।

এদিকে প্রতারণার এই ফাঁদে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন নাগরিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন লালবাজারের সাইবার থানায়। তারই ভিত্তিতে পার্ক স্ট্রিটের ইলিয়ট রোডে সেই ভুয়ো কলসেন্টারে হানা গিয়ে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই প্রসঙ্গে লালবাজারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোনও একটি ভুয়ো কলসেন্টারের মামলায় একসঙ্গে এতজনকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা  কলকাতায় সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি। একইসঙ্গে এও জানানো হয়েছে, ধৃতদের মধ্যে কলসেন্টারের দুই মালিকও রয়েছেন।

লালবাজার গোয়েন্দা দপ্তর সূত্রে খবর, মূলত অস্ট্রেলিয়ার নাগরকিদের টার্গেট করে যোগাযোগ করা হতো এই কল সেন্টার থেকে। খুব কম খরচে তাঁদের কম্পিউটারকে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ‘অ্যান্টি ভাইরাস প্রোটেকশন ডিভাইস’ কেনার প্রস্তাব দেওয়া হতো। কেউ কেউ তাতে রাজি হলে তাঁদের গিফট কুপনেরও টোপ দেওয়া হতো। একদিকে কম্পিউটারের সুরক্ষা, অন্যদিকে গিফট কুপন, এই দুইয়ের আশায় অনলাইনে পেমেন্টও করে দিতেন অনেকে। এরপর আদতে কাউকেই অ্যান্টি ভাইরাস প্রোটেকশনও দেওয়া হতো না। না ছিল গিফট কুপনের সুবিধা। পাশাপাশি লালবাজারের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, গত বারো বছরে এভাবে অস্ট্রেলিয়ার কয়েক হাজার নাগরিক এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই এই ভুয়ো সংস্থাটিকে চিহ্নিত করতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা।

এরপরই এই ভুয়ো কলসেন্টারের অফিসে হানা দিয়ে গোয়েন্দারা দেখেন, ৯০টি টেবিলে কাজ চলছে। এই অফিস থেকে ৮৯টি কম্পিউটর, ৮৯টি সিপিইউ, ৮১টা মোবাইল ফোন, একাধিক হার্ড ডিস্ক সহ আরও বেশ কিছু সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে এও জানান,’এই চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণা চক্রের যোগসাজশ থাকতে পারে।

তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ভুয়ো কলসেন্টারে তল্লাশি চালিয়ে প্রথমে ৬০ জনকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে অনেকে এই সংস্থায় নতুন কাজে যোগ দিয়েছেন। ফলে তাঁদের প্রাথমিক জেরার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিদের প্রতারণা, জালিয়াতির পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + twenty =