কলকাতা পুলিশকে কাঠগড়ায় তুললেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস৷ পুলিশের একটা অংশ রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট, মঙ্গলবার এমনই অভিযোগ করতে শোনা গেল রাজ্যপালকে। নানা ঘটনায় দিন কয়েক ধরেই কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যেমন, কলকাতার একের পর এক জায়গা থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। বিহার থেকে দুষ্কৃতীরা এসে থাকছে কলকাতার একাধিক জায়গায়। এই কথা জানা যাচ্ছে। অতি সম্প্রতি কসবার তৃণমূল বিধায়কের উপর হামলা হয়। প্রকাশ্য রাস্তায় তার দিকে গুলি ছোঁড়া হয়। ওই ঘটনাতেও বিহারের যোগ আছে বলে খবর৷ সেই অবস্থায় কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় তৃণমূল নেতৃত্বের একটা অংশকেও। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকেও দেখা গেছে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে। সাংসদ সৌগত রায়ও পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। তৃণমূলের অন্দরে কলকাতা পুলিশ নিয়ে একাধিক মত প্রকাশ হচ্ছে৷ পক্ষে – বিপক্ষে মন্তব্য করছেন তৃণমূল নেতারা। এবার সেই কলকাতা পুলিশকেই কাঠগড়ায় তোলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর মতে, রাজ্যে দুষ্কৃতীদের যেভাবে দাপাদাপি চলছে তাতে পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। সঙ্গে এও জানান, পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্থ। আর সেই কারণে রাজ্য সরকার মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, এদিন এমনও বলতে শোনা যায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে।
এদিক আরজি কর কাণ্ডের পর কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আর এই ইস্য়ুতেই রাজ্যপাল নিজে কলকাতা পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কারণ, আরজি কর কাণ্ডে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ধৃত সঞ্জয় রাই। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার বিনীত গোয়েলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে সে। কলকাতা পুলিশ তাকে মুখবন্ধ করে থাকতে বলে। এই কথাও বলেছিল সঞ্জয়। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছেন। একাধিক ঘটনায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্য সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। সব পুলিশ খারাপ একথা আমি বলছি না। তবে পুলিশের একটা অংশের রাজনীতিকরণ হয়েছে। হিংসা ও দুর্নীতি হল সমাজের সবথেকে বড় শত্রু। সরকারের এই নিয়ে পদক্ষেপ করা উচিত। তবে বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। এটা খুব দুর্ভাগ্যের। পুলিশের একটা অংশ দুর্নীতি করে। তাদের রাজনীতিকরণও হয়েছে। এটাই আমার পর্যবেক্ষণ। তবে কলকাতা পুলিশের সবাইকে একথা আমি বলছি না। কিন্তু রাজ্যপাল হিসেবে বলতে চাই, পুলিশের এই ভূমিকায় আমরা চিন্তিত।’ এদিকে কলকাতা রাজভবনে একটি বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আরজি কর কাণ্ড সাধারণ মানুষ সেখানে তাদের মতামত জানাতে পারবেন, সেই কথাও এদিন জানান রাজ্য়পাল।
পাশাপশি এদিন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এও জানান, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর তৃতীয বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে ‘আপনা ভারত, জাগতা বেঙ্গল’ নামে একটি দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই কর্মসূচির লক্ষ্য বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ভারতের বৈশ্বিক শক্তির সংমিশ্রণকে তুলে ধরা। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ইতিমধ্যেই শাসন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, সমাজকল্যাণ এবং সামাজিক উদ্যোগ, সাংসকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠা, দুর্যোগ মোকাবিলা, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভাবন ও স্বচ্ছতা এবং সাংস্কৃতিক কূটনীতি ও জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে পদক্ষেপও নিয়েছেন।