ভোট গণনার রাতে অগ্নিগর্ভ ভাঙড়

ভোট গণনার রাতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ভাঙড়ে। কাঁঠালিয়ার গণনাকেন্দ্রের বাইরে পড়তে থাকে বোমা। সঙ্গে গুলির শব্দ। ভাঙড়ের অশান্তিতে দুইজন পুলিশকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারও আহত হয়েছেন বলে খবর। মঙ্গলবার রাত বাড়তেই নতুন করে উত্তপ্ত হয় ভাঙড়ের বেশ কিছু এলাকায়। শুধু কাঠালিয়াতেই নয় শানপুকুরের চণ্ডীহাট গ্রাম ও চালতাবেড়িয়া এলাকাতেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের উপরে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। এদিকে আইএসএফের অভিযোগ পুলিশের গুলিতে তাঁদের চার সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। তবে বুধবার সকাল বেলা সূত্রে খবর মেলে এক আইএসএফ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।  এদিকে রাতে এই গোলমালের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে রওনা হন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সিদ্ধিনাথ গুপ্তা সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী।

ঘটনার সূত্রপাত জেলাপরিষদে আইএসএফের প্রার্থী জাহানারা বিবিকে নিয়ে। আইএসএফ-এর দাবি তিনি নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু রাতে সরকারি আধিকারিক এবং তৃণমূল বাহিনী মিলে ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদেই আইএসএফ গণনা কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। চলে রাস্তা অবরোধ। সেই অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে আইএসএফ সমর্থকদের বচসা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। দু’পক্ষের মধ্যে চলে  রীতিমত গুলির লড়াই। তখনই পুলিশের গুলিতে চার আইএসএফ সমর্থক মারা যায় বলে আইএসএফ-র অভিযোগ। এরপর জনতা পুলিশকে আক্রমণ করে।  চলে বোমা গুলি। পুলিশ অবশ্য দাবি করে তারা রবার বুলেট চালিয়েছে।

এই ঘটনা ঘিরে চলে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের পালা। তৃণমূল অভিযোগ তুলছে আইএসএফের বিরুদ্ধে। আবার আইএসএফের দাবি, তৃণমূলই এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে। তবে এদিনের এই ঘটনায় কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয় কাঁঠালিয়া। ভোটগণনা কেন্দ্রের ভিতরে গণনাকর্মী, কাউন্টিং এজেন্টরা ভীত-আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এদিকে  গণনাকেন্দ্রের মধ্যেই তখন আটকে আরাবুল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, আরাবুল ইসলামকে মূল টার্গেট করে প্রায় ৫০০-র বেশি দুষ্কৃতী জড়ো হয় কাঁঠালিয়া হাইস্কুলের বাইরে। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা প্রত্যেকেই সশস্ত্র।

এদিকে গণনাকেন্দ্র চত্বরে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পুলিশ বাহিনী এবং সিআরপিএফ মিলিয়ে এক কোম্পানির কিছু বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী সেখানে মোতায়েন রয়েছেন। তাঁরা কাঁঠালিয়ার গণনাকেন্দ্রের ভিতরের অংশটিকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা চালান। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে বেগ পেতে হয় তাঁদের।

সূত্রে খবর, হাইস্কুলের সামনের গেটে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। অসমর্থিত সূত্রে খবর, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ জায়গায় পৌঁছায় যে, তা সামাল দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। ফাটানো হয় স্টান্ট গ্রেনেড। এতে বোমাবাজি ও গোলাগুলি আরও বেড়ে যায় বলেই খবর।  পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশকর্মীরা আরাবুল ইসলাম-সহ তাঁর ঘনিষ্ঠ তিন-চারজনকে গণনাকেন্দ্রের একটি ঘরে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করেন। আরাবুলের ছেলে হাকিবুল ইসলামের অভিযোগ, আইএসএফ আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালায়। হাকিবুল জানান, ‘ডিসিআরসির সামনে আইএসএফের গুন্ডাবাহিনী ঘিরে রাখে। তৃণমূল যে আসনগুলিতে জিতছে, সেগুলি আটকাতেই এই ঘটনা।’

তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাঙড়ের শাসক দলের দায়িত্বে থাকা শওকত মোল্লা সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। প্রশ্ন তোলেন, ‘আইএসএফ এলোপাথাড়ি গুলি-বোমা চালালে পুলিশ কেন গুলি চালাচ্ছে না? ডিসিআরসিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীও রয়েছে। কেন তারা গুলি চালাচ্ছে না?’ এদিকে আইএসএফ নেতা আব্দুল কালামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনিও এই ঘটনার সঙ্গে আইএসএফের যোগের দাবি উড়িয়ে দেন। তাঁর দাবি, ‘শওকত মোল্লার নেতৃত্বে তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী কাঠালিয়া স্কুলে বোমা চার্জ করছে। আর দোষ আমাদের দিকে চাপাচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − 8 =