বাসমতী ছাড়া অন্য ভ্যারাইটির চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি ভারতের

খামখেয়ালি আবহাওয়ার জেরে ক্ষতি হয়েছে চাষাবাদে।তারই জেরে খাদ্যপণ্যের চড়া দর। এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জেরবার অবস্থা আমজনতার।এই ছবিটা শুধু ভারতের নয়, একই ছবি বিশ্বের অন্য জায়গাতেও। নিজ দেশের খাদ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে রপ্তানি বন্ধের উপর জোর দিতে শুরু করেছে ভারত সমেত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই। অন্যদিকে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমস্যার মুখে সাপ্লাই চেইন। এই ত্রিফলায় বিদ্ধে গোটা বিশ্ব। দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সঙ্কট, এমনটাই জানাচ্ছেনঅর্থনীতিবিদরা।

এরই মধ্যে আফ্রিকার মতো দেশগুলিতে খাদ্য সঙ্কট শুরু হয়ে গিয়েছে। উন্নত বিশ্বেও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে অনেক।কারণ, ইউএসএ থেকে চিন, বিশ্বের বিস্তৃত এলাকায় প্রবল গরমে ফসল নষ্ট হচ্ছে।তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে ফল এবং দুধের উৎপাদন। চলতি সপ্তাহেই ভারত বাসমতী ছাড়া অন্য ভ্যারাইটির চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এক রিপোর্টে এমনটাই জানিয়েছে উপদেষ্টা সংস্থা নোমুরা হোল্ডিংস। এখানে একটা পরিসংখ্যান মনে রাখতেই হবে, গোটা বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা খাদ্য হিসাবে চালের উপর নির্ভরশীল। এদিকে ঘরোয়া বাজারে চালের দাম যাতে মাথাচাড়া না দেয়, সেই কারণেই রফতানির ক্ষেত্রে এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কেন্দ্র।

এদিকে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতে চালের দাম গড়ে ৯ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। আর সে কারণে বাসমতি ছাড়া অন্য চালের পাশাপাশি আরও কিছু ভ্যারাইটির চাল রপ্তানি বন্ধ করতে পারে কেন্দ্র।

এদিকে আবার ইউক্রেন থেকে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি বেশি করে গম আমদানি করে ভারত। কিন্তু, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে তা মার খেয়েছে। ব্ল্যাক সি পার করে শস্য রপ্তানির যে চুক্তি রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ছিল, সেই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছে রাশিয়া। এর ফলে সে দেশ থেকে ভারত সমেত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শস্য রপ্তানি জটিলতার মুখে।

এর পাশাপাশি সারের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে ঘাটতি। রাশিয়া বিশ্বে নাইট্রোজেন সারের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ এবং ফসফরাস ও পটাশিয়াম সার রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার মিত্র বেলারুশও গুরুত্বপূর্ণ সার রপ্তানিকারক। এই দুই দেশ মিলে বিশ্বের পটাশিয়াম সার চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ করে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সার রপ্তানিও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে খাদ্যপণ্যের দাম খুব তাড়াতাড়ি কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। দীর্ঘ দিন ধরে পণ্যের দর উঁচু স্বরে বাঁধা থাকলে বাজেট কমাতে হবে ক্রেতাদের।ফলে ঘরোয়া বাজারে সবজির দাম সবে কমতে শুরু করলেও সার্বিক ভাবে সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে।

সুদূর লন্ডনের ছবিও একই। সে দেশের চ্যাটহ্যাম হাউসের খাদ্য সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ টিম বেন্টন জানিয়েছে্ন, ‘আমরা এখনও মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। মূল্যবৃদ্ধি কমতে শুরু করলেও পণ্যের দাম যে কমবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।’ দক্ষিণ ইউরোপে প্রচন্ড গরমে গোরু দুধ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। নষ্ট হচ্ছে টোম্যাটো। এশিয়ায়, চিনের ধানজমি থেকে ভালো ফসল পাওয়া যাবে কি না সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। আর জুনে, তিন দশকের সব থেকে খারাপ ফলন দেখেছে ইউএসএ।এদিকে আবার সিসিলিতে বিরূপ আবহাওয়ায় পচন ধরাচ্ছে টমেটোয়। আগে কোনওদিন এমনটা দেখা যায়নি বলে জানান রপ্তানি সংস্থা নাটুরা’র হেড অফ গ্লোবাল সোর্সিং প্যাডি প্লানকেট। এদিকে ইতালিতেও আবহাওয়াজনিত কারণে ক্ষতির অঙ্ক গত বছরের ৬ বিলিয়ন ইউরোকে ছাপিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কৃষিগোষ্ঠী কলদিরেত্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 12 =