অর্থের দিক থেকে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে কলকাতা পুরসভার।তাই এবার যে- যে উপায়ে ট্যাক্স আদায় করা সম্ভব নগরবাসীর কাছে থেকে তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে। যেমন, রোদ-বৃষ্টি ঠেকাতে শহরের অনেক দোকান, ক্যাফে এবং রেস্তরাঁর মালিক বাইরে পর্দা টাঙিয়ে রাখেন। কেউ কেউ আবার টিনের শেডও দেন। প্রচারের জন্য অনেক দোকানের বাইরে ডিজিটাল বোর্ড, হোর্ডিং দেওয়া থাকে। এ সবের জন্য কলকাতা পুরসভা বিশেষ কর নেয়। যা পরিচিত ‘পর্দা ট্যাক্স’ হিসেবে। তবে বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে এই ট্যাক্স থেকে আয় বাড়াতে উদাসীন ছিলেন পুরকর্তারা। কলকাতা পুরসবার মেয়র খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিমই এই ট্যাক্সের বিষয়ে জানতেন না। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানার পরেই পর্দা ট্যাক্স বাবদ আয় বাড়াতে যা যা করণীয়, সেই ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মেয়র। সঙ্গে ফিরহাদ হাকিম সোমবার এও জানিয়েছেন যে,, ‘পুরোনো ব্যবস্থা সরল করে অনলাইন করা হবে। তাতে রাজস্ব বাড়বে।’
এই পর্দা ট্যাক্সের ব্যাপার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানতে পারেন কিছুদিন আগেই ‘টক টু মেয়র’- অনুষ্ঠান থেকেই। সূত্রে খবর মিলছে, এই অনুষ্ঠানে বেহালার বাসিন্দা অজিত মাইতি আবেদন করেন, রেস্তরাঁর বাইরে টাঙানো পর্দার জন্য নির্দিষ্ট পুরকর দেওয়ার ব্যবস্থা অনলাইনে করলে ভালো হয়। যা শুনেই কিছু সময়ের জন্য চুপ করে যান মেয়র ফিরহাদ। এরপর তিনি বলেন, ‘২৫ বছরে ধরে কাউন্সিলার। তবে এমন ট্যাক্সের কথা তো শুনিনি।’ এরপরেই আধিকারিকদের থেকে রিপোর্ট তলব করেন মেয়র। এরপর আধিকারিকরা তাঁকে জানান, পুরসভার পথচলার দিন থেকেই এই কর নেওয়া হয়। আগে এ জন্য ‘বেলিফ’ নিয়োগ করা হতো। যাঁরা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে কোন দোকান, রেস্তরাঁ টিনের শেড, পর্দা বা হোর্ডিং কটা লাগিয়েছে বা তার আকার কত বড় তা দেখে বিল তৈরি করতেন। ১৯৯০-এর পর থেকে এই পদটি আর নেই। বর্তমানে পুরসভার কর মূল্যায়ন এবং বিজ্ঞাপন বিভাগের আধিকারিকরা রাস্তায় ঘুরে এই বিল তৈরি করেন।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার আধিকারিকেরা এও জানিয়েছেন, মেন রাস্তার উপরে কোনও দোকানের বাইরের অংশ ১ মিটার ঘেরার জন্য ২১০ টাকা নেওয়া হয়। ভিতরে দোকানে হলে ১ মিটারের জন্য ফি দিতে হয় ৯৫ টাকা। তবে ট্রেড লাইসেন্স, সম্পত্তি করের বিল অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও পর্দা ট্যাক্সের ক্ষেত্রে সে নিয়ম না-থাকায় এই বিভাগে আয় কমেছে অনেকটাই। সেই সঙ্গে লোকবলের অভাবে নতুন করে যাঁরা পর্দা বা হোর্ডিং টাঙিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
এই প্রসঙ্গে একটা তথ্যও সামনে এসেছে পরসভার তরফ থেকে। পুরসভার হিসেব বলছে, বর্তমানে শহরে যে সংখ্যক দোকান থেকে পর্দা ট্যাক্স নেওয়া হয়, তার থেকে অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি দোকানে এই ব্যবস্থা রয়েছে। সব দোকানকে এই ট্যাক্সের আওতায় আনা গেলে ৫ কোটি টাকা আয় হবে প্রতি বছরে। সে কারণেই মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন, দ্রুততার সঙ্গে পর্দা ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা অনলাইনে করতে হবে। আয় বাড়াতে অন্য বিভাগের লোকেদের কাজে লাগানোর কথাও বলেছেন তিনি।