দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। ছাত্রছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই রাজ্যের ক্যাম্পাসে। তৃণমূলের মাতব্বর বাহিনীর দখলে ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে দুর্নীতি–দু্ষ্কৃতি চক্রের আখড়া। কসবায় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণকাণ্ডে এই মর্মে সরব হতে দেখা গেল এসএফআই, ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দকে। একইসঙ্গে তাঁদের তরফ থেকে এও জানানো হয়, ছাত্রছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দুষ্কৃতী–দুর্নীতি রাজ চালানো হচ্ছে। তারই একটি নমুনা কসবার এই কলেজ।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা জানান, ‘রাজ্যের সরকার দুষ্কৃতি ও গুন্ডাদের সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, রাজ্যে বারবার অপরাধে জড়িত থাকতে দেখা গিয়েছে এই তৃণমূলকেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই দৌরাত্ম্য চলছে। একে বদলাতে হবে।’
বৃহস্পতিবার কোঝিকোড়ে এসএফআই সর্বভারতীয় সম্মেলনের মঞ্চ থেকে এই মর্মে সরব হয়েছেন এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্য্যী এবং রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার এবং তীব্র আন্দোলন জারি রাখার ডাকও দেন তাঁরা।
এদিকে শুক্রবার কসবায় থানা ঘেরাওয়ে অংশ নেন ধ্রুবজ্যোতিও। সেখানেই তিনি বলেন, ‘এই সরকারের দায়িত্বে থাকার কোনও অধিকার নেই কারণ কারণ পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই পচা গলা ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের অধিকার থাকবে না। কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে না আনলে এই রকম চোর ধাপ্পাবাজরা আরও বেশি করে জায়গা করে নেবে। তাই সরকারের পরিবর্তন চাই রাজ্যের মাটিতে। বিকল্পের ভাবনার সরকারকে নিয়ে আসতে হবে।’
শুক্রবার কসবায় বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করে এসএফআই ডিওয়াইএফআই ও মহিলা সমিতিও। বিজন সেতু থেকে কসবা থানা পর্যন্ত মিছিল সংগঠিত হয়। কসবা থানার সামনে বসে বিক্ষোভরত ছাত্র যুব দের উপর নির্মম লাঠি চালায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা,কলকাতা জেলা সভাপতি সম্পাদক সহ অন্যান্য ছাত্র–যুব নেতৃবৃন্দকে। ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে করে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। বাকিদের রাখা হয় কসবা থানাতেই। এর মাঝে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
কোনও একটি ঘটনা নয়, একের পর এক ঘটনায় ধর্ষণের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ। কসবার এই কলেজেও অপরাধের পন্থা এক। তবু অপরাধ লঘু করতে অন্য ঘটনার নজির টানতে নেমে পড়েছে তৃণমূল। ধর্ষণের অভিযোগ চাপা দিতে সালিশি সভা ডেকে হুমকির ঘটনাও সামনে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। অপরাধীদের শাস্তির চেয়েও প্রতিটি ঘটনায় তৃণমূল ব্যস্ত থেকে প্রতিবাদ দমাতে। কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ–খুন কাণ্ডেও এমনই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে রাজ্য। শাসানি সংস্কৃতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরা। অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে প্রতিবাদীদেরই আক্রমণের নিশানা করা হয়েছে।
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ঘটনায় তৃণমূলের সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী শশী পাঁজাও বামপন্থী ছাত্র–যুব–মহিলাদের প্রতিবাদকে ‘অপরাধ নিয়ে রাজনীতি’ আখ্যা দিয়ে এই বিক্ষোভকে লঘু করার চেষ্টা করেছেন। আর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা ঘটনায় তাঁর সংগঠনকে জড়ানোয় আপত্তি-ই তুলে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ধর্ষকদের সম্পর্ক পুরোপুরি অস্বীকার করতে না পারলেও তাদের নেতা হিসেবে মানতে নারাজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি। অথচ কলেজ চত্বরে প্রধান অভিযুক্তের রাজনৈতিক প্রভাব ধরা পড়েছে পুলিশের কাছে দায়ের নির্যাতিতার অভিযোগ পত্রে। তৃণমূলের একাধিক শীর্ষস্তরের নেতানেত্রীর সঙ্গে ছবিও দেখা গিয়েছে।