চরম বিতর্কের মুখে মহানায়ক সম্মান-২০২৩

সোমবার মহানায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘মহানায়ক সম্মান’ প্রদান করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গত বছর সোহম ও নুসরত জাহানকে মহানায়ক সম্মান দেওয়া হয়েছিল, এবার তালিকায় যোগ হল অঙ্কুশ, সায়ন্তিকা, শুভশ্রীদের নাম। তবুও ব্রাত্যই রইলেন জিৎ। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ জিৎ ভক্তরা। এদিকে ‘মহানায়ক’ সম্মান পেয়ে ট্রোলের মুখে অঙ্কুশ, সায়ন্তিকারা। একজন লেখেন, ‘আচ্ছা সায়ন্তিকা শেষ ছবি কোনটা ছিল?’ এদিকে শ্রাবন্তীর পোস্টে তো এক সিনেপ্রেমী তো লিখেই বসলেন, ‘আরও কী কী দেখতে হবে কে জানে। ছিঃ ছিঃ এদের নিজেদেরও কি লজ্জা করে না একটুও।’ কেউ আবার বলেছেন, ‘মহানায়ক উত্তম কুমারকে এইভাবে অপমান করার কোনো মানে আছে, এই ফ্লপ নায়িকাকে ভূষিত করে।’ আরও একজন আরও এক পা এগিয়ে বলেন, ‘শ্রাবন্তী লজ্জাশরম নেই তোমার।’, কেউ আবার বলছেন, ‘যারা যোগ্য তারা পেল না, এসব কী হচ্ছে?’ প্রশ্ন ওঠে, যেখানে জিতের মতো অভিজ্ঞ এই পুরস্কার পাননি, সেখানে অঙ্কুশ কীভাবে এই সম্মান পাওয়ার যোগ্য তা নিয়েও। ফলে সব মিলিয়ে চলতি বছরের ‘মহানায়ক’ পুরস্কার প্রাপকদের তালিকা প্রকাশ্যে আসা মাত্রই সমাজমাধ্যমে ঠাট্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সায়ন্তিকা, শুভশ্রী, শ্রাবন্তী কী এমন ছবি করেছেন যে তাঁদের ‘মহানায়ক’ সম্মান দেওয়া হল তা নিয়েই।’ পাশাপাশি কেউ কেউ এও বলেছেন, সায়ন্তিকা তৃণমূলের হয়ে বিধানসভা ভোটে লড়ে হেরে যান। এরপর থেকে অভিনয় ভুলে রাজনীতিতেই মন দিয়েছেন অভিনেত্রী। দীর্ঘদিন অভিনয় জগতে দেখাই যায় না।তাহলে তাঁকে ঠিক কী কারণে এই সম্মানে ভূষিত করা হল তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এরই পাশাপাশি পুরস্কার তালিকা দেখে নেটিজেনদের অভিযোগ, শাসকদল ঘনিষ্ঠ তারকা বা সে দলের সাংসদ-বিধায়কদের বেছে বেছে বিশেষ সম্মানে পুরস্কৃত করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। অপর মহানায়ক সম্মান প্রাপক শুভশ্রী, তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর স্ত্রী। পুরস্কার নিয়ে কম খোঁটা শুনতে হচ্ছে না শুভশ্রীকেও। অঙ্কুশ সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত না হলেও দিদি-পন্থী হিসাবেই পরিচিত।

শুধু নেটিজেনরাই নয়, রাজ্য সরকারের তরফে জিতের প্রতি উদাসীনতার অভিযোগ এনেছেন প্রযোজক রানা সরকার। বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে হামেশাই চর্চায় থাকেন এই প্রযোজক। এবার জিৎ কে মহানায়ক সম্মান প্রদান না করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ তিনিও।

প্রসঙ্গত, রাজনীতি থেকে লক্ষ যোজন দূরে থাকেন জিৎ। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া তো দূর অস্ত, রাজনৈতিক সমাবেশেও ভিড় করতে দেখা যায় না জিৎকে। অথচ বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অবদান ভোলার নয়। অবাঙালি এই অভিনেতা ২৩ বছর ধরে সবটা উজাড় করে দিয়েছেন টলিউডের জন্য়। অনুরাগীদের দাবি, তৃমমূল শিবিরের সঙ্গে যুক্ত নন বলেই সম্মান জানানো হয় না তাঁকে। রানার পোস্টের কমেন্ট বক্সে এক জিৎ ভক্ত লেখেন- ‘জিৎ তো কারুর পা চাটে না সেই কারণে পান না সম্মান।’

এদিকে মহানায়ক সম্মান পাওয়ার পর সায়ন্তিকা জানান, ‘আমাকে এই বৃহত্তর সম্মানের যোগ্য ভাবার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই মাতৃসমা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর পশ্চিমবঙ্গ ও সর্বোপরি আমার দর্শককে। সম্মান ও ভালবাসা এক শিল্পীর সারা জীবনের সম্পদ, এই সম্মান আরও ভাল করে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেবে। ধন্যবাদ।’ এই পোস্টের পরই ধেয়ে আসে সমালোচনা। তীব্র কটাক্ষ করে একজন এমনও লেখেন, ‘ভাল করে চটি চাটার পুরস্কার।‘ আরেকজনের প্রশ্ন, ‘কোন সিনেমার জন্য মহানায়ক সম্মান পেলেন একটু বলবেন?’ আরেকজন লেখেন, ‘সারা কেরিয়ারে একটাও হিট সিনেমা নেই। শুধু রাজনীতি করে পুরস্কার জিতেছেন।’ এই বছর প্রথম নয়, গত বছর নুসরতের ‘মহানায়ক’ সম্মান পাওয়া নিয়েও বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। তাঁর ছবিগুলির নাম তুলে ধরা অনেকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মহানায়ক’র নামে নামাঙ্কিত একটি পুরস্কার পাওয়ার মতো যোগ্যতা কি তাঁর আদৌ আছে?

তবে এমন নানা কটাক্ষকে এখন আর তেমন আমল দেন না তাঁরা। এদিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সকলকে সম্মান দেওয়া হয়েছে। কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। যাঁরা যোগ্য তাঁদের প্রত্যেককে ‘মহানায়ক’ সম্মানে ভূষিত করা হবে বলে জানান তিনি।আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে যোগ্যতার মাপকাঠিটা ঠিক কী তা নিয়েই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − one =