কসবা ঘটনার তদন্তে নেমে একটা ঘটনা স্পষ্ট যে, সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজ কর্তৃপক্ষের আস্কারাতেই মনোজিৎ মিশ্রের এতোটাই দাপাদাপি। মনোজিতের কলেজ ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণের কথা কলেজ কর্তৃপক্ষ জানতো না তা নয়। এরপরও কোনও এক অদৃশ্য ক্ষমতার জেরে তার সব দোষ মাফ হয়ে যেতো কি না সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। একইসঙ্গে তদন্তে নেমে এও জানা গেছে , মনোজিৎ মিশ্রকে কলেজের দায়িত্ব অফিশিয়ালি কলেজ কর্তৃপক্ষেরই দেওয়া, আর সেখানে তাকে অফিস স্টাফ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্র–ছাত্রীদের কলেজ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য কলেজের প্যাডে বিজ্ঞপ্তি জারিও করা হয়েছে এই সাউথ কলকাতা ল কলেজের তরফ থেকেই। তবে মনোজিতের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে রয়েছে বিস্তর রহস্য। প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে কলেজের অফিশিয়াল লেটার হেডে মনোজিতকে দেওয়া হল এমন দায়িত্ব তা নিয়ে। শুধু তাই নয় কলেজের অস্থায়ী কর্মী হয়েও অফিসিয়াল গ্রুপ চালাতো মনোজিত বা কী করে এটা সে করতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এর পাশাপাশি এ খোঁজও চলছে, গণধর্ষণের পর ওইদিন কাকে কাকে ফোন করেছিলেন মনোজিৎ সে ব্যাপারেও। খতিয়ে দেখা হয়, সেই সময় কী করছিল তারা। আর তা জানতেই মূল অভিযুক্তের মোবাইলের কল লিস্ট খতিয়ে দেখে পুলিশ। তাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যাচ্ছে, ঘটনার পর কলেজ থেকেই মূল অভিযুক্ত তৃণমূলেরই প্রভাবশালী এক ছাত্রনেতাকে ফোন করেছিলেন। তারপর তাঁর বাড়িতেও যেতে চান মূল অভিযুক্ত। কিন্তু সেই প্রভাবশালী ছাত্রনেতা রাজি হননি। এবার প্রশ্ন, এই প্রভাবশালী ছাত্রনেতা কে রয়েছে বিস্তর ধোঁয়াশা। এই সূত্র ধরেও পুলিশ তদন্ত করে জানতে চাইছে, এই তিনজন তারপর কোথায় গিয়েছিল। তারা প্রমাণ লোপাটের কোনও চেষ্টা করেছিল কি না।
এদিকে সোমবার থেকে খুলে যাচ্ছে কসবার এই ল কলেজ। তবে এই কলেজ খোলা হলেও দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি শর্ত। সেখানে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল আটটা থেকে খুলবে কলেজ। চলবে দুপুর দুটো পর্যন্ত। সমস্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সকাল আটটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত কলেজে থাকতে পারবেন। ওই সময়ের পর কলেজের নিরাপত্তারক্ষী বরুন মাহালি সমস্ত ঘর চেক করে সবাইকে বাইরে বের করে মেন কেটে তালা দিয়ে দেবেন।
পাঁচ বছরের বিএএলএলবি কোর্সে পঠনরত প্রথম সেমিস্টারের পড়ুয়ারা যারা পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করতে পারেননি, তারা ৭ তারিখ সকাল দশটা থেকে বারোটার মধ্যে কলেজে থাকবেন ও ফর্ম ফিলাপের কাজ করবেন। সে ক্ষেত্রে গেটে তাদেরকে আই কার্ড দেখিয়ে তারপর ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। যদিও তদন্ত চলায় বন্ধই থাকছে ইউনিয়ন রুম এবং গার্ডরুম। সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের তরফে ক্লাস শুরুতে অনুমতি মেলার পরই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল যোগাযোগ করেন উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক শীর্ষ কর্তার সঙ্গে। তারপরেই পরিচালন সমিতির বৈঠকে পড়াশোনা শুরু করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এদিন বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও অষ্টম সেমেস্টারের পড়ুয়ারা তাদের প্রজেক্ট পেপারের জন্য যথাক্রমে ৮,৯ এবং ১০ জুলাই ন’টা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কলেজে থাকবেন এবং আই কার্ড দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। এলএলএম –এর পড়ুয়ারা ৮ জুলাই থেকে কলেজের বলে দেওয়া সুনির্দিষ্ট সময় কলেজে আসবেন ও ক্লাস করবেন। উপযুক্ত অফিসিয়াল প্রয়োজন ছাড়া কোনও পড়ুয়াকে কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।