চিনের উল্টো পথে হেঁটে আসিয়ান সেন্ট্রালিটি’-কে পূর্ণ সমর্থন মোদির

ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির এক কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হল আসিয়ান গোষ্ঠী। ভারতের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিকল্পনায় এই গোষ্ঠীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর এই ২০তম আসিয়ান-ভারত শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চকে ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার নাম না করেই চিনকে কড়া বার্তা দিতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। চিনের সম্পূর্ণ বিপরীতে হেঁটে, তিনি ‘আসিয়ান সেন্ট্রালিটি’-র পক্ষেও ভারতের পূর্ণ সমর্থনই যে শুধু ব্যক্ত করলেন তাই নয়, মুক্ত এবং নিয়ম তান্ত্রিক ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পক্ষেও জোরালো সমর্থন জানান। দক্ষিণ চিন সাগরে, চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে আসিয়ান সদস্যদের উদ্বেগের মধ্যে, প্রধানমন্ত্রীর এদিনের মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য করিডোর। এই এলাকার উপর চিন তার সম্পূর্ণঅধিকার দাবি করে। এই নিয়ে আসিয়ান গোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি সদস্য দেশের সঙ্গে বেজিংয়ের বিরোধ রয়েছে। কারণ, তারা ‘আসিয়ান সেন্ট্রালিটি’ বা ‘আসিয়ান কেন্দ্রিয়তা’র কথা বলে। এর অর্থ হল, ইন্দো-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে যে সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলি রয়েছে, তার মোকাবিলায় এবং বাহ্যিক শক্তিগুলির সঙ্গে আদানপ্রদানে কোনও বিশেষ দেশ নয়, আসিয়ান গোষ্ঠীই হবে প্রধান আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম। এদিকে ‘আসিয়ান সেন্ট্রালিটি’র ধারণা, এই অঞ্চল নিয়ে চিনা দাবির পুরোপুরি বিরোধী। এই অঞ্চলের দাবি নিয়ে ‘নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলে একদিন আগেই সতর্ক করেছিল চিন। এরপর দিনই প্রধানমন্ত্রী মোদির গলায় শোনা গেল এমনই কড়া মন্তব্য।

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায়, আসিয়ান-ভারত শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, ‘ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সব দেশের জন্য আন্তর্জাতিক আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এটা সময়ের প্রয়োজন। বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন এবং অনিশ্চয়তায় ঘেরা। আমাদের সকলের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল সন্ত্রাসবাদ, উগ্রপন্থা এবং ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের মোকাবিলা করা।’ আসিয়ান গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস এবং ভূগোল, ভারত এবং আসিয়ান গোষ্ঠীকে সংযুক্ত করেছে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবাধিকারের মতো মূল্যবোধে আমরা গাঁথা।’

প্রসঙ্গত, বুধবারই আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেন চিনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বন্দ্ব ‘নতুন শীতল যুদ্ধে’র সূচনা করতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি এও জানান, মতপার্থক্য, মতবিরোধ যথাযথভাবে মেটানো দরকার। সঙ্গে এও বলেন, ‘বর্তমান সময়ে, কোনও পক্ষ নেওয়া, ব্লক হিসেবে সংঘাতে যাওয়া এবং নয়া স্নায়ুযুদ্ধের বিরোধিতা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্য তারই জবাব বলে মনে করা হচ্ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 6 =