নীতিশের ডাকা মহাসম্মেলনে আসছেন না মায়াবতী, গররাজি আপ সুপ্রিমো কেজরিওয়ালও

প্রথমেই হোঁচট জোট গঠনে। শুক্রবার পটনায় নীতিশ কুমারের আহ্বানে পটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির মহা সম্মেলন হওয়ার কথা। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে এক ছাতার তলায় আসবে এমনটাই মনে করা হচ্ছিল কিন্তু গোড়াতেই কেমন তাল কাটল। কারণ, এই মহাসম্মেলনের ঠিক আগের দিন এই বৈঠকে যোগ দেবেন না বলে জানালেন বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী। বরং বিরোধী জোটকে চরম কটাক্ষ করে, নিদা ফজ়লির কবিতার লাইন তুলে ধরেন মায়াবতী। ‘দিল মিলে না মিলে, হাত মিলাতে রাহিয়ে।’ এতে এই মহাসম্মেলন নিয়ে যে চরম কটাক্ষ করলেন তা বুঝতে আসুবিধা হয়নি কারও। ইঙ্গিত পরিষ্কার, বিরোধী দলগুলির মধ্যে ঐক্য নেই, নেই নীতির মিলও। মায়াবতীর মতে, এই অবস্থায় জোর করে জোট গড়ার চেষ্টার আগে, দলগুলি জনতার কাছে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করলে ভাল হত। এতে আমজনতার আস্থা অর্জন করা যেত। একইসঙ্গে তিনি এ অভিযোগও করেন, বিরোধী জোটে উত্তর প্রদেশের নেতাদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

এখানে বলে রাখা শ্রেয় এই প্রসঙ্গে চার-চারটি টুইট করেন উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী জোট সম্পর্কে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে জানান, ‘বৃদ্ধি, দারিদ্র, বেকারত্ব, অনগ্রসরতা, অশিক্ষা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, ধর্মীয় উন্মাদনা, ধর্মীয় হিংসা গ্রস্ত দেশে সাধারণ মানুষের যা হাল, তাতে স্পষ্ট যে, ভীমরাও আম্বেদকরের মানবতাবাদী, সাম্যবাদী, সংবিধান প্রয়োগের ক্ষমতা কংগ্রস বা বিজেপির নেই।‘ বিরোধী জোটের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মায়াবতী বলেছেন, ‘মুহ মে রাম অর বগল মে ছুরি’। সঙ্গে এও বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে সবথেকে বেশি লোকসভা আসন রয়েছে, ৮০টি। কাজেই লোকসভা নির্বাচনে জিততে গেলে উত্তরপ্রদেশে জয় গুরুত্বপূর্ণ।‘ আর এরই রেশ ধরে মায়াবতী এও জানান, ‘বিরোধী দলগুলির মনোভাব দেখে তাঁর মনে হয়নি যে তারা উত্তর প্রদেশকে উপযুক্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।‘ সঙ্গে তিনি এ প্রশ্নও তোলেন, ‘সঠিক অগ্রাধিকার না ঠিক করে, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলে কি তা দেশে প্রয়োজনীয় বদল আনতে পারবে?’

যদিও মায়াবতীর এই টুইট আক্রমণকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জনতা দল ইউনাইটেড। উল্টে জেডিইউ-এর তরফ থেক দাবি করা হয়, মায়াবতীকে আমন্ত্রণ জানানোই হয়নি। কাজেই বিরোধী ঐক্যে ফাটলের প্রশ্ন এখানে আসেই না। বিএসপি ছাড়াও, নবীন পট্টনায়কের বিজেডি এবং কেসিআর-এর ভারত রাষ্ট্র সমিতিকেও বিরোধীদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কারণ, এই দুটি দলই বিজেপি এবং কংগ্রেস এই দুই শিবির থেকেই সমান দূরত্ব বজায় রাখে। অনেক ইস্যুতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে সমর্থনও করতে দেখা গেছে।

এদিকে বৈঠকের আগে বেঁকে বসেছে আপও। আপ প্রধান কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, ‘কংগ্রেস যদি কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্স-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যোগ না দেয়, আপ-ও আগামীকালের বৈঠকে যোগ দেবে না। বৈঠকে যোগ দেবেন না রাষ্ট্রীয় লোকদলের প্রধান জয়ন্ত চৌধুরীও। নীতিশ কুমারকে চিঠি লিখে আরএলডি সভাপতি জানিয়েছেন, তাঁকে এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল, কাজেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার উপায় নেই।

তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত যা খবর তাতে শুক্রবারের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন, সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যয়ও। সব মিলিয়ে মোট ২০টি বিরোধী দলের নেতারা এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে সূত্রে খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 1 =