বেহাল কলকাতা পুরসভার আর্থিক অবস্থা, বকেয়া অর্থ না মেলায় টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না ঠিকাদারেরা

আর্থিক হাল কিছুতেই ফিরছে না কলকাতা পুরসভার, অন্তত এমনটাই ধারনা  ঠিকাদারদের টেন্ডারে অংশ না নেওয়া দেখে। কারণ, ঠিকারদারদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে পাওনা রয়েছে বকেয়া টাকা। আর সেই কারণেই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারদের তরফ থেকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এর রেশ পড়েছে কলকাতা পুরসভার বরো ভিত্তিক উন্নয়নের কাজে। পুর পরিষেবা সংক্রান্ত উন্নয়নমূলক কাজ, রক্ষণাবেক্ষণ বা নতুন কিছু তৈরির কাজ শহরের বহু অংশে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। এদিকে পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও কাজের টেন্ডার ডাকা হলে, ন্যূনতম তিন জনকে অংশ নিতে হয়। কিন্তু এখানে তিন জন তো দূর অস্ত, একজনও টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে কাজের জন্য টেন্ডার ডেকেও তা বাতিল করতে হচ্ছে পুর-প্রশাসনকে।

এদিকে পুরসভার তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থ বর্ষ থেকে ঠিকাদারদের পাওনা বাকি রয়েছে। কয়েকশো বিল জমা পড়ে রয়েছে পুরসভার অর্থ বিভাগে। কিন্তু সেই অর্থ মেটাতে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। যা বর্তমানে পুরসভার সাধ্যের মধ্যে নেই। বিষয়টি অস্বীকার করেননি খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও।

ফলে রাস্তা খোঁড়া পর তা সংস্কার করে পিচের প্রলেপ দেওয়া থেকে শুরু করে নতুন আলোর ব্যবস্থা বা নিকাশি নালার সংস্কার, এমনকি বস্তির উন্নয়নও আটকে রয়েছে এই টেন্ডার জটিলতায়। স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার ১৬ বরো চেয়ারম্যান এবং শাসক-বিরোধী মিলিয়ে প্রায় সব কাউন্সিলর চরম বিপাকে। তবে মেয়র বা মেয়র পারিষদ সদস্যরা অথবা কিছু প্রভাবশালী কাউন্সিলর নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে নিজ নিজ এলাকার কাজ করে নিতে সক্ষম হলেও বাকিরা অথৈ জলে।

পাশাপাশি কলকাতা পুরসভার অর্থ বিভাগ সূত্রে এ খবরও মিলেছে যে, এক একটি বরোকে বরো ইন্টিগ্রেটেড ফান্ড এবং কাউন্সিলর ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে বছর প্রতি ৪০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়। কাউন্সিলরদের জন্য ২৫ লক্ষ অর্থাৎ দু’বারে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার করে এবং বরো গুলির জন্য ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। পুর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত এবং স্থায়ী সম্পদ তৈরির জন্য এই টাকা বরাদ্দ করা হয়। কাউন্সিলর বা বরোগুলি থেকে নিজে নিজে এলাকার উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করে। সেই ফাইল বরোতে তৈরি করে পুরসভার সদর দপ্তরে তা পাঠানো হয়। অনুমোদিত অর্থ থেকে সেই টাকা ব্যয় করা হয় সুপারিশ করা কাজে। কিন্তু কাউন্সিলরদের সেই সুপারিশ বা বরো চেয়ারম্যানদের তরফ থেকে আসা যাবতীয় ফাইল এখন লাল-ফিতের গেরোয় বন্দি। বহু ফাইল অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকলেও অর্থের অভাবে তা করা যাচ্ছে না। এদিকে সঙ্কটে নাগরিক পরিষেবাও। বরোর চেয়ারম্যানরা বিষয়টি নিয়ে বারবার মেয়রের কাছে সরব হলেও পুর কোষাগারে ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষেও দুহাত তুলে দেওয়া ছাড়া কিছু করা সম্ভবপর হচ্ছে না। বেকারদায় পড়ে মেয়র রাজস্ব বৃদ্ধির সাফাই দিলেও আদৌ তা কতটা বাস্তবায়ন হবে এবং নাগরিক পরিষেবা যে বকেয়া কাজ রয়ে গিয়েছে, তা কবে শেষ হবে বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরাও।

পুরসভার বর্তমান আর্থিক অবস্থা যে ভাল নয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। এই প্রসঙ্গে ফিরহাদ জানান, ‘আর্থিক দিক থেকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। প্রায় দু’হাজার কোটি টাকার সঙ্কট রয়েছে। আমি চাপ দিয়েছি রাজস্ব আদায়ে। আমাদের কর্মীরা ভাল করে রাজস্ব আদায় করছেন। আর বছর দুয়েক যদি এটাকে চালাতে পারি, তাহলে আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই ভাল জায়গায় পৌঁছাব।‘

স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা সজল ঘোষের বক্তব্য, ‘বিনা বিলে কাজে করলে একমাত্র সেই লোকটা টাকা পাবে। তবে সোজা পথে কাজ করে, লেবারকে টাকা দিয়ে, সুদ ক্ষতি করে, সেই লোকটা এমনিই ব্যবসা করতে পারবে না। একজন যদি ১ লক্ষ টাকার কাজ করে, ২০ হাজার টাকা এমনিই ওকে দিতে হবে, বাকি আরও ২০ হাজার বিভিন্ন খাত সহ জিএসটি মিলিয়ে দিতে হবে। তাহলে হাতে থাকে ৬০ হাজার টাকা। তাও আবার তিন বছর বাদে। সেই কারণেই আজকে অবস্থাটা এই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − six =