রবীন্দ্রভারতীর অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে শুভ্রকমল দায়িত্ব নিলেও উঠে গেল প্রশ্ন

আচার্য সি ভি আনন্দ বোসও বেনজির সব পদক্ষেপ করে চলেছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের অশান্তি রুখতে পিস রুম খোলা বা অন্তর্বর্তী উপাচার্য হোক বা কার্যকরী উপাচার্য, বিভিন্ন জেলা সফরেরর মতো নানা ঘটনায় রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বেড়েছে। আর এই পরিস্থিতিতেই আচার্য সিভি আনন্দ বোস রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে।

এরপর শুক্রবার শুক্রবার রবীন্দ্রভারতীর বিটি রোডের ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছন নতুন উপাচার্য। তার আগে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসেও যান। সেখান থেকে বিটি রোড ক্যাম্পাসে এসে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এদিকে আবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সম্প্রতি যে ‘পিস অ্যান্ড হারমনি’ কমিটি গঠন করেছেন তার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছেন এই প্রাক্তন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কেই।

পঞ্চায়েত ভোটের আবহেও এই নিয়োগ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে শিক্ষামহলে। কারণ, অধ্যাপকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, বিচারপতি তাঁর ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য হিসাবে তাঁর নিয়োগ আদৌ কি যথার্থ তা নিয়ে উঠল প্রশ্ন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, ইউজিসির নিয়ম অনুসারে, অধ্যাপনা অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক হিসাবে বা গবেষকে হিসাবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকলে স্থায়ী উপাচার্য হওয়া যায় না। তবে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তেমন কোনও নিয়ম না থাকলেও  উপাচার্য হওয়ার প্রাথমিক শর্তই তো একজন শিক্ষাবিদ হওয়া। বিচারপতি আইনের ময়দানে শ্রেষ্ঠতমও হতে পারেন কিন্তু তার মানে তিনি উপাচার্য হতে পারেন, তেমন নজির আছে বলে মনে করতে পারছেন না কেউই। এদিকে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন আচার্য বোস। যা নিয়ে মামলা হয়েছে হাইকোর্টে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রায়ও দিয়েছে, এ নিয়োগ বেআইনি নয়। এদিকে  শিক্ষামহলের তরফ থেকে দেখানো হচ্ছে অন্য যুক্তি। জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় জানান, ‘উপাচার্য হওয়ার জন্য ইউজিসির কিছু নিয়ম আছে। ১০ বছরের প্রফেসর বা সমতুল পদে থাকতে হবে। শিক্ষাবিদ হতে হবে। কিছুদিন আগে রাজ্য সরকার এই নিয়মটা বদলে ৫ বছর করেছিল। যদিও কোর্ট তা খারিজ করে বলেছে ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে।’  আর এখানেই প্রশ্ন, ‘তাহলে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য কীভাবে ১০ বছর পড়ানোর অভিজ্ঞতা না থাকার পর, অ্যাকাডেমিক কাজকর্মে যুক্ত না থাকার পরও নিযুক্ত হতে পারেন কি? তিনি প্রাক্তন বিচারপতি। তাঁর জায়গায় তিনি বিচক্ষণ ব্যক্তি হতে পারেন। তবে ইউজিসির যা আইন তাতে কোনওভাবেই যিনি অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে সরাসরি যুক্ত নন তাঁকে উপাচার্য করা যায় না।‘

একই বক্তব্য শিক্ষাবিদ নন্দিনী মুখোপাধ্যায়েরও। তাঁর কথায়, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা বরাবর বলে আসছি একজন শিক্ষাবিদের এই ধরনের কাজ করা উচিত। উপাচার্য তো শিক্ষাবিদের বাইরে হতেই পারেন না। তাঁকে যা যা দেখতে হয়, বিচারপতির প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি এটা তো সম্ভব না।‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 9 =