নিরাপত্তার কারণে মণিপুরের চুরাচন্দনপুরে সড়কপথে যেতে দেওয়া হল না রাহুলকে, অবশেষে গেলেন কপ্টারে

মণিপুরের চুরাচন্দনপুর জেলা। গত ৩ মে থেকে চলা হিংসায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই জেলাই। বৃহস্পতিবার প্রথমে বিমানে ইম্ফল আসেন রাহুল। এরপর মণিপুর সফরের প্রথম দিন সেই জেলাতেই যেতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। সড়কপথেই চুরাচন্দনপুর গিয়ে, সেখানকার মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন তিনি। একাধিক আশ্রয় শিবিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, ইম্ফল থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুরে তাঁর কনভয় আটকে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে মণিপুর পুলিশ। তাদের দাবি, রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণেই তাঁর কনভয় আটকানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে সড়কপথে চূড়াচন্দনপুর যাওয়ার বদলে, হেলিকপ্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এই প্রসঙ্গে বিষ্ণুপুরের পুলিশ সুপার জানান, সড়কপথে গেলে রাহুলের কনভয়কে হামলাকারীদের গাড়ি বলে ভুল করতে পারে স্থানীয়রা। সেই ভুল থেকে তাঁর কনভয়ের উপর হামলা করা হতে পারে। এরই রেশ ধরে বিষ্ণুপুর পুলিশ সুপার এ প্রশ্নও তোলেন, ‘এই অবস্থায় আমরা রাহুল গান্ধীকে কীকরে যেতে দিতে পারি? আমরা তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এখানে এখনও পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। গত রাতেও কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাহুল গান্ধীর কনভয়কে স্থানীয়রা চুরাচন্দপুরে হামলাকারীদের গাড়ি বলে ভুল করতে পারে।‘ এরপর ইম্ফলে ফিরে হেলিকপ্টারে করেই চুরাচন্দনপুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাহুল গান্ধি। এদিকে এদিন রাহুল গান্ধির সফর সঙ্গী হয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল। তিনি জানান, ‘বিষ্ণুপুরের কাছে রাহুল গান্ধির কনভয় আটকে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওরা আমাদের যাওয়ার অনুমতি দিতে পারছে না। সেই অবস্থায় নেই ওরা। মানুষ রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধির দিকে হাত নাড়ছেন। কেন ওরা আমাদের থামাল বুঝতে পারছি না। রাহুল গান্ধীর শুধু ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার চলে এসেছি। কোথাও কোনও রাস্তা অবরোধ করা হয়নি।’ সঙ্গে কটাক্ষের সুরে এ প্রশ্নও ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘জানি না স্থানীয় পুলিশকে কে কী নির্দেশ দিয়েছে।’ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও এই ঘটনায় প্রেক্ষিতে মণিপুর সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী পথ’ নেওয়ার অভিযোগ করেন। এই নিয়ে টুইটও করেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘মণিপুর নিয়ে একবারও মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী। তার বদলে রাহুল গান্ধির পথ আটকে দেওয়া একান্তই ধিক্কার জানানোর মতো।’

এদিকে হিংসাধ্বস্ত মণিপুরে রাহুল গান্ধির সফর নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করেন বিজেপি মুখপাত্র, অমিত মালব্য। টুইটারে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘২০১৫-১৭ সালেও মণিপুরে হিংসার ঘটনা চলছিল। তখন কেন রাহুল গান্ধি বা অন্য কোনও কংগ্রেস নেতা সেখানে যাননি?’ প্রসঙ্গত, সেই সময় রাজ্যে ওকরাম ইবোবি সিং-এর কংগ্রেসী সরকার ছিল। মণিপুর পিপলস বিল, মণিপুর ভূমি সংস্কার (সপ্তম সংশোধনী) বিল এবং মণিপুর শপস অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল পাস করেছিল সেই সরকার। এই তিনটে বিল পাস ঘিরেই হিংসা ছড়িয়েছিল মণিপুরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 3 =