সোহমবাবু, মাত্র ২ বছর পর বিধানসভা নির্বাচন

সোহমবাবু, বেশ চিন্তিতই হলাম আপনার কাহিনী শুনে। বেশ করেছেন, ঠিক করেছেন। সত্যিই তো আপনার পিছনে এতো জোর, সে প্রশাসনের জোরই বলুন বা শাসকদলের জোর, সেটা কী করে ভুলে গেলেন বলুন তো ওই রেস্তোরাঁর মালিক! আপনি বিধায়ক। আপনার ১০০ শতাংশ হক আছে যে কোনও জায়গায় গাড়ি রাখার। তাতে আমজনতার কোনও অসুবিধা হল কি হল না, সেটা তো আপনার দেখার কথাই নয়। তার ওপর আপনি কে এই প্রশ্ন তুলেছেন ওই রেস্তোরাঁর মালিক। কী আশ্চর্য! তিনি জানেনই না যে, আপনি মহা বাহুবলী সোহম চক্রবর্তী। যার নামে সারা বাংলার যুগ সমাজ আলোড়িত হয়।সবথেকে বড় কথা তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ওই রেস্তোরাঁর মালিক। তাতেই নাকি আপনি নিজেকে আর সামাল দিতে পারেননি। মানে কন্ট্রোল করতে পারেননি। আসলে ‘কন্ট্রোল’, ‘কন্ট্রোল’ বলে নিজেকে যে একটা পরিধির মধ্যে আটকে রাখেন উঁচু দরের জননেতারা ,সেটার সঙ্গে আপনি এখনও যে ঠিক ধাতস্ত হয়ে উঠতে পারেননি তা ওই রেস্তোরাঁর মালিক জানবে কোথা থেকে বলুন তো!

কিন্তু শোভনবাবু একটু খেয়াল করে দেখবেন, এই মুহূর্তে আমরা দাঁড়িয়ে ২০২৪-এ। সবে লোকসবা নির্বাচনে একটা বড় ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে শাসকদল। খুব ভাল কথা। এটাই হওয়ার ছিল। কারণ, বিরোধী শূন্য বাংলায় অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার জায়গাই নেই। তবে সামনে ২০২৬-এ বোধহয় আরও একটা নির্বাচন সামনে আসছে। সেখানে ভাল ফল করতে সবার আগে দরকার জনসংযোজন বাড়ানো। একটু খেয়াল করে দেখুন, দলের সুপ্রিমো অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত এ ব্য়াপারে পাখি পড়ার মতো আউড়ে চলেছেন। কারণ, বিধাননসভায় সংখ্য়াধিক্য বজায় রাখতে গেলে জনগণকে পাশে দরকার। সেটা বোধহয় আপনি ভুলে গেছেন। আর মনে রেখেই বা করবেন কি ? কারণ, আপনার পাশে রয়েছে শাসকদল। একবার বিধায়ক হয়েছেন। পরের বারও হবেন। তবে মনে রাখবেন, ‘দেয়র ইজ মেনি এ স্লিপ বিটউইন কাপ অ্যান্ড দ্য লিপ।’

এখানে আরও একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকে যাচ্ছে। আপনার অভিযোগ, তৃণমূলের সেকেন্ড-ন-কমান্ডকে নিয়ে কোনও খারাপ উক্তি করাতে আপনার খারাপ লেগেছে। ঘটনাটা বোধহয় সেটা নয় সোহমবাবু। আসলে আপনি কে এই প্রশ্নেই আপনার সহ্যশক্তির বাঁধ ভেঙে পড়ে। আপনি একজন মহান বিধায়ক, যিনি আমজনতার ভোটের জেরে বিধানসভা কক্ষে প্রবেশ করেন, তাঁকে-ই কি না প্রশ্ন! আচ্ছা সোহমবাবু, এদিনের এই ঘটনার পর যদি আপনার ক্ষেত্রে আপনার ভোটারদের একটা বিরাট অংশ প্রশ্ন তোলেন, তাহলে? আপনি বিধায়ক, তৃণমূল সুপ্রিমোকে দেখা গেছে আপনাকে পাশে নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে প্রচার করতেও। তার মানে তো এই নয়, আপনার কাণ্ডকারখানা দলের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করবে। এটা কাক্ষিত নয়।

আপনি একজন রক্ত মাংসের মানুষ। আপনার কাজের প্রচণ্ড চাপ । সব মানলাম। কিন্তু যাঁর গায়ে আপনি হাত তুলেছেন, তিনি কি তাহলে মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছেন বলে আমরা ধরে নেবো? তাঁর রেস্তোরাঁর সামনে গাড়ি রাখা বা পথ আটকানো মানে তো কোথাও একটা তাঁর ব্যবসায় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছেন আপনি, সহজ কথায় পেটে লাথি মারছেন। তাও আবার সন্ধে থেকে রাত হওয়ার দিকে। রেস্তোরাঁর ব্যবসায় প্রাইম টাইম। সেটা আপনি বেমালুম ভুলে গেলেন। অথচ, আপনি একজন জনপ্রতিনিধি। এরপর আপনার মনে হল একটু  আপনার গায়ের জোর পরখ করার।  তারপর ক্ষমাও চইলেন। বললেন, দু-চারটে মেরেছি। সাবাস। সত্য়িই তো তাতে কি-ই বা হয়েছে। আপনার হাতে মার খেলে (ওই দু-চারটে)।  এরপর এই ক্ষমা চাওয়ার অর্থ অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়। আর আপনার দেখানো পথে এবার আপনার ফলোয়াররা হাঁটলে…..ক্ষতিটা কার সোহমবাবু?  ক্ষতি আপনার নয়, কারণ পুলিশ আপনার সঙ্গে আছে। এ ক্ষতি এই মুহূর্তে আপনি টেরও পাবেন না। যা ড্যামেজ করার তা করে ফেলেছেন। ভেবে দেখুন তো, সাধারণ মানুষ যদি এই ঔদ্ধত্যকে মেনে নিতে না পারে? মনে রাখবেন, ৩৪ বছরের শাসন ভেঙে পড়েছিল ঔদ্ধত্যের জন্যই। সিঁদুরে মেঘ দেখলে গোরুও সতর্ক হয়, একটা প্রবাদ আছে জানেন তো। এমন কোনও ঘটনা বোধহয় না ঘটানোই বাঞ্ছনীয়, যেখানে মানুষ আপনাকে দেখলেও মুখ ফিরিয়ে নেবে। তবে এটাও ঠিক, মানুষ কিন্তু অপেক্ষা করে আছে শসকদল এই ঘটনায় কী পদক্ষেপ করে সেটা দেখার জন্যও।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 11 =