কিডনি,হার্ট,লিভারের মথো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা এই রাজ্য তথা গোটা দেশে মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। কিন্তু এবার রাজ্যে যা হল তা শুধু বাংলায় হয়, গোটা পূর্বাঞ্চলে প্রথম। প্রথমবারের জন্য হাত প্রতিস্থাপন হল কলকাতায়। জটিল এই অস্ত্রোপচারকে বাস্তবে সম্ভব করলেন এসএসকেএম-এর চিকিৎসকেরা। আর এই সাফল্যের জন্য এসএসকেএম-এর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যুইটে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন,’প্রশংসনীয় হাত প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচারের জন্য আমি এসএসকেএম-এর সরকারি চিকিৎসক এবং সমস্ত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের অভিনন্দন জানাই। আপনাদের এই ধরনের চমৎকার উদ্যোগ সত্যিই আমাদের গর্বিত করেছে।’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শনিবার ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়েছিল অস্ত্রোপচার। শেষ হয় রবিবার ভোর ৩টে নাগাদ। একটানা ২২ ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী মিলিয়ে ৩২ জনের মেডিক্যাল টিম গঠন করে অসাধ্য সাধন করে এ রাজ্যের হাসপাতাল। এরপর ২৭ ঘণ্টা ভেন্টিলেশনে রেখে দেওয়া হয়েছিল ওই যুবককে। এরপর রবিবার সকাল ন’টা নাগাদ ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই যুবককে রাখা হয়েছে সিসিইউ-তে। আপাতত তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অধীনে আপাতত চিকিৎসাধীন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাস্তা পারাপারের সময় গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন উলুবেড়িয়ার রাজপুর করাতবেরিয়ার বাসিন্দা হরিপদ রানা। প্রথমে তাঁকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ারে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। দুর্ঘটনার পর থেকেই সংজ্ঞাহীন ছিলেন হরিপদ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ১৩ জুলাই রাতেই বোঝা যায় ব্রেন ডেথ হচ্ছে তাঁর। তারপরেই তাঁর পরিবারকে মরণোত্তর অঙ্গদান প্রসঙ্গে বোঝাতে শুরু করেন চিকিৎসকেরা। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়ে প্রথম থেকেই রাজি ছিলেন হরিপদর স্ত্রী।
এদিকে যাঁর দেহে হরিপদ রানার হাত প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, বিরাটির বাসিন্দা সেই ব্যক্তির হাত বিদ্যুতের শক লেগে ঝলসে গিয়েছিল বছর খানেক আগে। ডান কনুইয়ের নীচ থেকে বাদ দিতে হয়েছিল হাত। কিন্তু ভবিষ্যতে প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনার কথা ভেবে তখনই শিরা, ধমনী, স্নায়ুকে ঠিক রেখে কোমর থেকে মাংস নিয়ে তা ঢেকে দেন চিকিৎসকেরা। ওই যুবকের বাঁ হাতটিও পুরোপুরি অসাড় হয়ে যায়। শুক্রবারই তাঁকে এসএসকেএম-এর প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এরপর শনিবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত চলে অস্ত্রোপচার। উদ্যোগটি খুবই ভাল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তবে প্রতিস্থাপন করা মানেই সেটি ১০০ শতাংশ সফল তা বলা যাবে না। কারণ, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনায় অনাক্রম্যতার কারণে প্রত্যাখ্যানের হার কিডনির ক্ষেত্রে যেখানে ১০ শতাংশ, হাতের ক্ষেত্রে তা ৮৬ শতাংশ।