সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো নিয়ে শুভেন্দু প্রশ্ন তুলতেই সাফাই স্বাস্থ্য সচিবের

হুগলির আরামবাগের প্রফুল্ল চন্দ্র সেন মেডিক্যাল কলেজের মতো এক সরকারি মেডিক্যাল কলেজে একটি মাত্র সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে নাকি খরচ হয়েছে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৯৭৪ টাকা, এমনই অভিযোগ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। এরই পাশাপাশি শুভেন্দুর আরও দাবি, ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টল করতেও নাকি খরচ পড়েছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪০০ টাকা। সিসিটিভি ইনস্টলেশন নিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের দরপত্র থেকে এই অঙ্ক কষে শুভেন্দুর প্রশ্ন, কীভাবে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টলেশনে এত খরচ হয় তা নিয়েই।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সিসিটিভি বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল। এরপরেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজসহ রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিতরাত্তিরের সাথীপ্রকল্পের অধীনেই এই সিসিটিভি বসানোর কাজ হয়। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে রাতে যাতে মহিলারা সুরক্ষিত থাকেন, সেই লক্ষ্যেই এই প্রকল্প তৈরি করেন মমতা। হাসপাতালগুলিতে সিসিটিভি বসানোর পাশাপাশি ডাক্তারদের বিশ্রামঘর, পুলিশ প্যাট্রলিং প্রভৃতির বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

শুভেন্দুর অভিযোগ, মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রফুল্ল চন্দ্র সেন মেডিক্যাল কলেজে ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য যে দরপত্র প্রকাশ করেছে, তাতে মোট বাজেট ১ কোটি ৭৫লক্ষ ৯৮ হাজার‍ ৭৩৯ টাকা দেখানো হয়েছে। একই ভাবে ২৮ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ১৯৫টি সিসিটিভি বসাতে মোট ৩ কোটি ২২ লক্ষ ৫২ হাজার ৯২৩ টাকার দরপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।

মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন থেকে রাজ্যেরই অন্য সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে পাঠানো ওই দুটি দরপত্রেই সাত দিনের মধ্যে সিসিটিভি বসানোর কাজ শেষ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি দরপত্রেই এই কাজআরজেন্টবলে উল্লেখ করা হয়েছে।

শুভেন্দু সোমবার এই দুটি দরপত্রের প্রতিলিপি ফাঁস করে ফেসবুকে লেখেন, ‘রাজ্যের মানুষ জানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সীমাহীন দুর্নীতির পাঁকে নিমজ্জিত। কিন্তু এই দরপত্র সব দুর্নীতিকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

শুভেন্দুর এই অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। শুভেন্দুর অভিযোগের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব তিনি দলের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের বক্তব্য, ‘টেন্ডারিং করে এই কাজ হয়েছে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা এই কাজ করেছে, ফলে অনিয়মের কোনও প্রশ্ন নেই। আপাতত দৃষ্টিতে একটি সিসিটিভির ইনস্টলেশনের খরচ বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু প্রত্যেকটি সিসিটিভি ক্যামেরার নির্দিষ্ট কনফিগারেশন, স্পেসিফিকেশন রয়েছে। নেটওয়ার্কিংএর খরচ রয়েছে। তাই মোট বাজেটকে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে যে অঙ্ক পাওয়া যায়, সে ভাবে এটার হিসাব করা যায় না।

তৃণমূলের সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘শুভেন্দু হাওয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ নাকরে যদি ওঁর হাতে প্রমাণ থাকে উনি এই বিষয়টি বিধানসভায় তুলুন। বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিকে জানান। যে কোনও সরকারি প্রকল্প রূপায়ণের আগে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে টেন্ডার হয়, পরবর্তী সময়ে অডিট হয়। শুভেন্দু অতীতেও অনেক অভিযোগ করেছেন কিন্তু কোনও অভিযোগে টেকেনি।

অভিযোগ উঠেছে, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কর্পোরেশন দুটি মেডিক্যাল কলেজে সিসিটিভি বসানোর জন্য বাজেট ঠিক করে দিলেও এই দরপত্রে কী ধরণের সিসিটিভি বসানো হবে, নেটওয়াকিং কেমন হবে, অ্যানুয়াল মেনটেন্যান্স কী হবে, তার বিশদ কোনও উল্লেখ নেই।

সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ছোটবড় বহুতলে সিসিটিভি বসানোর কাজ করেন, এমন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্ণধারের বক্তব্য, ‘অ্যাডভান্সড এনভিআর সিস্টেম, অত্যাধুনিক নাইট ভিশন ক্যামেরা, কেবল ও নেটওয়ার্কিং, মনিটরিং, ব্রডব্যান্ড কস্ট, অ্যানুয়্যাল মেনটেন্যান্স, এই সব মিলিয়েও একটি সিটিটিভি ক্যামেরা বসানোর খরচ এক লক্ষ টাকার গণ্ডি কোনও ভাবেই পার হয় না। ছোট বহুতলগুলিতে আমরা এক লক্ষ টাকায় ২ মেগা পিক্সেল, ৪ মেগাপিক্সেল মিলিয়ে অন্তত পাঁচটি ক্যামেরা ইনস্টল করি এবং পুরো নেটওয়ার্কিংএর কাজ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + five =