কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে জটিলতা অব্যাহত। বুধবার বাহিনী মোতায়েন ইস্যুতে কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা ছিল কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি উদয় গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে। এদিনের শুনানি শেষে আদালতকে কমিশনের কাজে কোথাও হস্তক্ষেপ করতে দেখা গেল না। বাহিনী মোতায়েন নিয়ে আদালত অবমাননার মামলায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে যে রিপোর্ট তলব করেছিল আদালত, তাতে যে সন্তুষ্ট নয় ডিভিশন বেঞ্চ তাও এদিনের শুনানিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেবল মনোনয়ন পর্বেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে। সেক্ষেত্রে আদালতকে কমিশনের পরামর্শ, মানুষের আস্থা এবং ভরসা পাওয়ার মতো কাজ করতে হবে। পাশাপাশি রাজ্যকে নির্দেশ, নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করতে হবে। তা না হলে এই নির্বাচন সম্ভব নয়।
তবে এদিনের শুনানিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দফা বাড়ানো নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি। এদিকে বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী কবে আসবে, সেটা নিয়েও কোনও শব্দ খরচ করেনি কেন্দ্র। ফলে ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীর ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েই গেল।
এদিনের সওয়াল জবাবের সময়ে, গত ২৪ জুন কমিশনের চিঠি প্রসঙ্গ উঠে আসে। যেখানে কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানতে চেয়েছিল, রাজ্যে আসা বাহিনী কীভাবে কাজ করবে? ‘স্ট্যাটিক’ থাকবে না, বুথে থাকবে অর্থাৎ বাহিনীর ব্যবহার কী হবে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই চিঠির কোনও উত্তর কমিশনের তরফে মেলেনি। কেবল কোন জেলায় কত বাহিনী দরকার, সেই তথ্য জানানো হয়েছে। সেই বিষয়টি এদিন আদালতে উল্লেখ করা হয়।
আদালতে কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী জানান, গত ২৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান রেলওয়ে বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়, অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাডিশনাল ট্রেনের ব্যবস্থা করতে। তখন বিচারপতি জানতে চান, কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে কমিশনের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে কি না তা নিয়ে। উত্তরে, কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, কেন্দ্র বার বার কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে বাহিনীর বেসিক অ্যামেনিটিস, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং কোথায় কীভাবে থাকবে, যাতায়াত কীভাবে করবে। সেই তথ্য এখনও দেয়নি কমিশন।
এরপর কমিশনের তরফে আইনজীবী জানান, এই প্রশ্নের স্পষ্ট কোনও উত্তর নেই কমিশনের কাছে। বিচারপতি তখন পরামর্শের সুরে জানান, ‘আপনারা নিজেরা যোগাযোগ করুন। এমন কিছু করুন যাতে মানুষ সন্তুষ্ট হয়। নির্বাচন দোরগোড়ায়। কিছু করুন যাতে সাধারণ মানুষ আপনাদের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।‘ পাশাপাশি কমিশনকে বিচারপতির পরামর্শ, ‘কিছু করে দেখান। আদালতকে দেখাতে হবে না। মানুষকে ভরসা জোগান। না হলে মামলার পর মামলা হবে। আন্তরিকভাবে করুন। আগে কী হয়েছে ভুলে যান। ভিডিয়ো কনফারেন্স করুন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি জওয়ান যাতে তাদের প্রাথমিক সুবিধাটুকু পান, কাজ করার সুযোগ পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকেই।‘ আর এই প্রসঙ্গেই ডিভিশন বেঞ্চের উল্লেখ্যযোগ্য পর্যবেক্ষণ, রাজ্য সচেষ্ট না হলে বা সহযোগিতা না করলে নির্বাচন কী করে হবে তা নিয়ে।
এদিকে মামলাকারীর তরফে বলা হয়, কমিশন চুক্তিভিত্তিক কর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের নির্বাচনের কাজে সরাসরি যুক্ত করছে। এরকম শয়ে শয়ে উদাহরণ রয়েছে। এখানেও আদালত অবমাননা করা হচ্ছে। কারণ আদালত ১৬ জুন নির্দেশ দিয়েছিল, সিভিক ভলান্টিয়রদের ভোটের কাজে যুক্ত করতে পারে না।
বুধবারের শুনানিতে আদালত কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করেনি বটে, তবে বেশ কয়কটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দেয়। রাজ্যকে স্পষ্ট নির্দেশ দেন বিচারপতি, যাতে তারা কমিশনকে সাহায্য করে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য, এর আগে আদালত যা নির্দেশ দিয়েছে, সেটা অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে। সেটিকে নিশ্চিত করতে হবে।