বামেদের লালবাজার অভিযানে উঠল পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবি

কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে আগেই লালবাজার অভিযান করেছে জুনিয়র ডাক্তারেরা। এবার শুক্রবারে পথে নামল বামেরা। দাবি একই, পদত্যাগ করতে হবে বিনীতকে। বামেদের এই অভিযান ঠেকাতে প্রস্তুতি নেওযা হয় কলকাতা পুলিশের তরফ থেকেও। রণসাজ সজ্জিত হওয়ার পাশাপাশি ৯ ফুট উঁচু ব্যারিকেড বসিয়ে লালবাজারের মুখে চলে প্রহরা। নিয়ে আসা হয় জল কামানও। বিক্ষোভকারীদের ধাক্কা সামাল দিতে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ঠিক মাঝখানে দুই মানুষ লম্বা যে গার্ড রেল বসানো হয়েছে সেগুলিকে আবার লোহার চেন দিয়ে বেঁধে ফেলাও হয়। মোতায়েন কয়েকশো পুলিশ। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ লালবাজার মোড়ও।

এদিকে এদিনের এই অভিযানে বামেদের তরফ থেকে অংশ নেন মহম্মদ সেলিম থেকে বিমান বসুর মতো হেভিওয়েট নেতারা। পরিকল্পনা, বউ বাজারের ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার মোড় থেকে মিছিল যাবে লাল বাজারের উদ্দেশ্যে। তবে তার আগেই ভারত সভা হলের কাছে ব্যারিকেড বসিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের তরফ থেকে।

এদিনের মিছিলে পা মেলাতে মেলাতে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীকেও বলেন, ‘বিনীত গোয়েল তো পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বাধা দিয়েছেন। আটকে রেখেছেন। সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নাকি আটকে রেখেছিলেন। এখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তিনিও পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে কে বাধা দিয়েছে জানি না। দল কী তাঁর কথা শুনছে না?’ এখানেই না থেমে তাঁর সংয়োজন, ‘আমাদের দাবি পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ। পুলিশ কমিশনার মাস্ট গো। উনি যেভাবে কলকাতা চালিয়েছেন তাতে গোটা দেশের কাছে বাংলার মান, মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে।’

এরপরই ফিয়ার্স লেনে পুলিশের তরফ থেকে বাধা দেওয়া মাত্র ব্যারিকেডের উপরেও উঠে পড়তে দেখা যায় প্রচুর বাম কর্মীদের। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। বাধা পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওই জায়গাতেই রাতভর অবস্থান করবেন বলেন জানিয়ে দেন বামফ্রন্ত চেয়ারম্যান বিমান বসু। মিছিল থেকেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উঠতে থাকে লাগাতার স্লোগান। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিও আরও জোরালো হয়। ক্ষোভ উগরে দেন মহম্মদ সেলিম থেকে শতরূপ ঘোষের মতো বামেদের সব প্রজন্মের নেতারাই।

এদিন বিমান বসুকে বলতে শোনা যায়, ‘সারা রাত এখানে অবস্থান হবে। প্রায় ৩০ ঘণ্টা আমরা এই অবস্থান কর্মসূচি করব। সভা হবে, প্রতিবাদী গান হবে। আমরা বিচার চাই। উই ডিমান্ড জাস্টিস।’ ফুঁসে ওঠেন সেলিমও। বলেন, ‘ইতিহাস বলছে কোনও মানুষ ক্ষেপে গেলে কোনও দুর্গ, কোনও প্রাচীর বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। শুধু আঘাতে আঘাতে তাকে চূর্ণ করতে হয়। সবে তো শুরু হল। সারা রাত অবস্থান তো চলবেই।’

ক্ষোভ উগরে দেন শতরূপও। তার নিশানায় আবার পদ্ম শিবির। বলেন, ‘আমরা তো বিজেপির মতো ছদ্মবেশ নিয়ে আসেনি। যখন মনে হয়েছিল নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে থাকব তখন কোনও রাজনৈতিক সংকীর্ণতা বাদ দিয়ে আমরা পতাকা ছেড়ে ওই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। গায়ের জোরে নেতৃত্ব দখল করতে যাইনি। আবার যখন আমরা মনে করেছি বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে লালবাজার অভিযান করব তখন শুভেন্দু অধিকারীর মতো বুড়ো বয়সে ছাত্র সেজে ছদ্মবেশ ধারণ করিনি। প্রয়োজনে আমরা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে লালবাজার অভিযান করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 4 =