২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের একজোট হওয়ার বার্তা উঠল নীতিশের ডাকা মেগা বৈঠক থেকে

‘বিজেপি যদি ২০২৪-এ ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে তাহলে ভবিষ্যতে দেশে আর কোনও নির্বাচনই হবে না।’ শুক্রবার পটনায় বিরোধীদের বৈঠকে এমন ভাষাতেই আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিরোধীদের একজোট হওয়ার বৈঠক হলেও এদিন রাহুল গান্ধি, নীতীশ কুমার সহ বিরোধী নেতাদের সামনেই মমতা এ অভিযোগও জানান, ‘রাজভবন থেকে সমান্তরাল সরকার চালানো হচ্ছে বাংলায়।‘ এদিন পটনায় ১৭টি বিরোধী দলের নেতারা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি দেশজুড়ে যে অত্যাচার চালাচ্ছে তাতে ইতি টানতেই বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন৷শরদজি, লালুজির মতো বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতারা এখানে এসেছেন। রাহুল, ইয়েচুরিজি, অখিলেশ সকলেই এসেছেন। পটনা থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন গণআন্দোলনের রূপ নেয়। দিল্লিতে আমরা অনেক মিটিং করেছি কিন্তু ভালো ফল হয়নি। তাই পটনা থেকে শুভারম্ভ। আমরা সবাই এক। উই আর ইউনাইটেড। আমরা একসঙ্গে লড়ব। আমরা বিরোধী নয়, আমরাও দেশপ্রেমিক, আমরাও ভারতমাতা বলি। সুতরাং, আমাদের বিরোধী বলে ডাকবেন না৷ আমরাও দেশের নাগরিক৷মণিপুর জ্বললে আমাদেরও খারাপ লাগে৷বিজেপি-র অত্যাচারী, একনায়তান্ত্রিক সরকার শেষ করতে হবে। কেউ বিরোধী কথা বললেই ইডি, সিবিআই লাগিয়ে দিচ্ছে। দলিত, মহিলা, কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তা করে না। একশো দিনের টাকা দেয় না৷ রক্ত বইলে বইবে, কিন্তু আমরা দেশকে রক্ষা করব।’

বিরোধী বৈঠকের পরে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে আনলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন আর ‘মর্জিমাফিক উপাচার্য নিয়োগ’ প্রসঙ্গ। তবে মমতার ওই উষ্মাকে অস্বাভাবিক বলে তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন না। তাঁদের মতে, রাজ্যপাল কেন্দ্রী সরকারেরই প্রতিনিধি বা প্রতিভূ। ফলে তাঁর কার্যকলাপ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মদতপুষ্ট’ এটা বলাই যেতে পারে। ফলে তাঁকে আক্রমণ আর কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ একই কথা। সাংবাদিক বৈঠকে মমতা সরাসরি অভিযোগ করেন, বাংলায় রাজভবন থেকে ‘সমান্তরাল সরকার’ চালানো হচ্ছে। কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই রাজ্যপাল চলছেন। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতার অনুরোধ উপেক্ষা করে গত মঙ্গলবার রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করে বোস। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘আমরা পশ্চিমবঙ্গে থেকেও কোনও ন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এর কথা শুনিনি! উনি তা পালন করে ফেললেন!’ নাম না করে রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে ‘মর্জিমাফিক’ উপাচার্য নিয়োগেরও অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম না করে রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে ‘মর্জিমাফিক’ উপাচার্য নিয়োগেরও অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিকে মিশন ২০২৪-এর লক্ষ্যে পটনায় বিরোধীদের যে মেগা বৈঠকের আয়োজনের উদ্যোক্তা নীতিশ কুমার জানান, এদিনের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন ১৫টি অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলের ৩০ জন প্রতিনিধি। মোদি সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে আগামীদিনে একসঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করা হয়েছে।বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে নীতিশ কুমারেরর বার্তা, ‘আগামীদিনে আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। সর্বসম্মতিক্রমে তা ঠিক করা হয়েছে। সকলেই মনে করছেন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করা বাঞ্ছনীয়। সকলেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। আগামীদিনে আরও আলোচনা হবে। সিমলায় আরও একটি মেগা বৈঠক হবে বিরোধীদের। সেই বৈঠক ডাকবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।’

পাশাপাশি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি এদিনের বৈঠক থেকে জানান, ‘ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতে আক্রমণ করছে বিজেপি। আমাদের প্রত্যেকের মতবাদ রক্ষা করেই আগামীদিনে একসঙ্গে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করব। মহাজোট তৈরি হওয়ার একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। তা ধীরে ধীরে সম্পন্ন হবে।’

এদিকে এদিনের এই মেগা বৈঠক নিয়ে জম্মুর জনসভা থেকে কটাক্ষ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বলেন, ‘যত সংখ্যকই বিরোধী দল ওই বৈঠকে যোগ দিক না কেন, ওরা কখনওই একজোট হতে পারবে না। আজ পটনায় ফোটোসেশন চলছে। ওরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও এনডিএ সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়। আমি ওদের বলতে চাই যে ২০২৪ সালেও ৩০০-রও বেশি আসনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই সরকার গড়বে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − seven =