রাজ্যের রাজনৈতিক হিংসা ও মৃত্যুর ঘটনার সংখ্যা বেমালুম চেপে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। এমনটাই অভিযোগ অ্যাকটিভিস্ট বিশ্বনাথ গোস্বামীর। একইসঙ্গে তিনি এও জানান, যে সংখ্যা তাঁর হাতে এসেছে তা আরটিআই করার পরই।
আর এই তথ্য সামনে আসার পর শুধুমাত্র ২০২১ সালের রাজ্যের ছবিটা কিন্তু মোটেই সুখপ্রদ নয়। এমনকী সরকারি আধিকারিকদের একাংশের মতে, খোদ রাজ্য প্রশাসনের এই চেপে যাওয়ার প্রবণতা রাজ্যের জন্য, দেশের জন্য মারাত্মক। হিংসার ঘটনা, মৃত্যুর ঘটনা চেপে গেলে তা আরও বাড়বে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। পাশাপাশি এও বলেন, ২০২১ সালে ‘ম্যাসিভ পোল ভায়োলেন্স’ হয় বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এই তথ্য যদি সরকার চেপে যায় তা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।
এদিকে বিভিন্ন জেলায় আরটিআই করে পাওয়া সরকারি নথি বলছে, ২০২১ সালে ১ হাজার ১৭টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৬০টি। রাজ্যের সব পুলিশ জেলা ও পুলিশ কমিশনারেটের ঘটনা ধরলে সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, কয়েকটি পুলিশ জেলা প্রশাসন আরটিআই-এর এর কোনও উত্তর দেয়নি। কেউ আবার বলেছেন ঘটনার সংখ্যা শূন্য। কেউ-কেউ তথ্য দিতেই অস্বীকার করেছেন। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলা আরটিআই-এর উত্তরে জানায় ‘নট অ্যাভেলেবেল’। সুন্দরবন পুলিশ জেলা তথ্যের জায়গা ফাঁকা রাখে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ আবার উত্তর না দিয়ে ওয়েবসাইট দেখে নিতে বলে। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক হিংসা সংক্রান্ত কিছুই মেলেনি। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটও ফাঁকা রেখে দেয় জায়গা।
আর এখানেই বিশ্বনাথ গোস্বামীর দাবি, সব কিছু ধরলে ঘটনার সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি। মৃত্যুর সংখ্যাও ৪৯-এরও বেশি। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে কলকাতা হাইকোর্টে হিংসা নিয়ে মামলায় রাজ্যপুলিশের ডিজি আদালতকে যে তথ্য দেন তাতে মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ দেখানো হয়েছে। এদিকে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, রাজ্যের পুলিশ প্রধান হাইকোর্টকে যে তথ্য দেন সেই তথ্য বিকৃত করে ওই বছরেই এনসিআরবি-কে পাঠানো হয়। সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক হিংসার সংখ্যা ৩৪। এবং মৃত্যু ৭। এই লুকোচুরির কারণ সম্পর্কে বিশ্বনাথবাবু জানান, ‘কিছু জেলা প্রশাসন আরটিআই-এর উত্তর দেবে না। মানুষের তথ্য জানার অধিকার এভাবে সংবিধান ভেঙে এড়িয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। রাজ্য কত ভাল সেটাই হয়ত প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে। রাজ্যে ঘটনা যতই ঘটুক, প্রশাসন দেখাতে চায় ঘটনার সংখ্যা সামান্য।’