যাঁরা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের ফেরানো হবে না, বার্তা অভিষেকের

নবজোয়ার কর্মসূচি থেকে বারবার দিয়েছিলেন হুঁশিয়ারি। টিকিট না পেলে নির্দল হিসাবে দাঁড়ালে দল থেকে বহিষ্কারের কথাও জানানো হয়েছিল। তারপরও টিকিট না পেয়ে বহু তৃণমূল কর্মীকেই নির্দল হিসাবে পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে দেখা গিয়েছে। এরপরই দেখা যায় এটা শুধু কথার কথা নয়, জেলায় জেলায় বহু কর্মীকেই রাতারাতি দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এদিকে ভোটের ফল বের হতেই দেখা যায় গোটা রাজ্যে কার্যত ঘাসফুল ঝড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু, দলের কথা না শুনে যাঁরা নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের আর দলে ফেরানো হবে না বলে শুক্রবার ফের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।তবে পাশাপাশি এটাও বলে রাখলেন, অন্য দল থেকে যাঁরা তৃণমূলে ভিড়তে চাইছেন তাঁদের জন্য দলের দরজা সর্বদা খোলা রয়েছে বলে জানান তিনি। শুক্রবার এসএসকেএম-এর চত্বর থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘যাঁরা তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়েছে বা সাসপেন্ড হয়েছে তাঁদের নেব না। তবে অন্য দল থেকে এলে দরজা খোলা। কারণ, এঁরা তৃণমূলের সঙ্গে বেইমানি করেছে। অন্য দলের প্রতীকে জিতে তৃণমূলে আসার আগ্রহ দেখালে দরজা খোলা রয়েছে।’ প্রসঙ্গত, এদিন ভোট সন্ত্রাসে আহত তৃণমূল কর্মীদের দেখতে এসএসকেএমে এসেছিলেন অভিষেক। সেখান থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াতে দেখা যায় তাঁকে। এদিন এসএসকেএম থেকে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, ‘আমাদের দলের ১৪ জন সহকর্মী কলকাতায় এসেছেন। এসএসকেএমে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। আমি ১৪ জনের সঙ্গে দেখা করেছি। কথা বলেছি। পূর্ব মেদিনীপুরে আমাদের এক কর্মীর উপর নির্বাচনের সময় আক্রমণ হয়েছিল। তাঁকেও দেখতে আমি এসেছিলাম। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে তাঁদের উপর আক্রমণ হয়েছে। নন্দীগ্রামে কার্যত বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। এক নম্বর ব্লকে জেলা পরিষদের তিনটি আসনই তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে। পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল জিতেছে। সাতটা অঞ্চল তৃণমূল জিতেছে। মহিলাদেরও ওরা ছাড়েনি। খুন-ধর্ষণের শাসানি দেওয়া হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের আক্রমণ করেছে। ওদেরও রেহাত করেনি।” যাঁরা হামলা করেছে তাঁদের তালিকাও ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন অভিষেক। শীঘ্রই তা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেবেন বলেও জানান।

এরই রেশ ধরে অভিষেক এদিন এও জানান,  সারা বাংলায় সাত হাজার বুথে ভোট গ্রহণ হলেও মাত্র ৬০ – ৬২টি বুথে অশান্তি হয়েছে। সেটা গড়ে ১ শতাংশ নয়। এমনকি, বেশিরভাগ জায়গায় বিরোধীরা বিশেষত বিজেপি সন্ত্রাস গড়ে তুলেছে বলে মত তাঁর। এই প্রসঙ্গে অভিষেক  এদিন এও বলেন, ‘ ৭ হাজার বুথে একদিনে ভোট হয়েছে, সেখানে যদি ৬০-৬২টি বুথে যদি কোনও ঘটনা ঘটে, সেটা গড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ০.১ শতাংশে।’ পাশাপাশি অভিষেক এও মনে করিয়ে দেন, আলিপুরদুয়ার, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সহ এমন একাধিক জেলায় ভোটের দিন কোনও অভিযোগ উঠে আসেনি। এরই রেশ ধরে অভিষেকের কটাক্ষ, ‘বিরোধীদের অভিযোগ মান্যতা দিয়ে নির্বাচনের দুদিন পরেই ৭০০টি বুথে পুনর্নির্বাচন হয়েছে। পুরো পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১০০ শতাংশ বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছে।’ আর এখানেই অভিষেকের প্রশ্ন, ‘এর আগে কোনও দিন দেখেছেন? আমরা বলেছিলাম, বিরোধীদের দমন করার চিত্র আমরা বদলাতে পারব। আমরা সেটা পেরেছি।’ এই প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক এও বলেন, ‘ যা হিংসা হয়েছে তার জন্য দায়ী বিচার ব্যবস্থার একাংশ এবং শুভেন্দু অধিকারী।’ কারণ হিসেবে তিনি দেখান, নন্দীগ্রাম সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একাধিক বিজেপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে যাতে পুলিশ ব্যবস্থা না নিতে পারে, তার ছাড়পত্র নেওয়া রয়েছে হাইকোর্ট থেকে। প্রায় ৪২ জন বিজেপি কর্মী আদালতের এই রক্ষাকবচ পান। অভিষেক এই বিষয়টিকে তুলে ধরে বলেন, এই কারণেই বিজেপির নেতারা সন্ত্রাস চালানোর সাহস পেয়েছে।

পাশাপাশি, বিচার ব্যবস্থার একাংশের প্রতিও এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় অভিষেককে। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট প্রটেকশন দিয়ে রেখেছে। সমাজ বিরোধীদের বাঁচিয়ে হাইকোর্টের একাংশ এসের মদত দিচ্ছে। রাজ্যের মেশিনারি অকেজো পড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দিল্লির অর্ডারে এসব করা হচ্ছে।’ এখানেই শেষ নয়, অভিষেক এদিন এও দাবি করেন, বিচারব্যবস্থার একাংশের কারণে দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এরপর নাম না করে কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতিকে তীব্র নিশানা করেন তৃণমূল নেতা। এরই সূত্র ধরে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতি তোপ দেগে বলেন, নন্দীগ্রামের তৃণমূল কর্মীদের মারধরের ঘটনায় জড়িত বিজেপি নেতাদের হাইকোর্ট রক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছে, সেই কারণে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারছে না। অভিষেক বলেন, ‘প্রলয় পাল, অশোক করণ সহ নন্দীগ্রামের যেসব বিজেপি নেতারা আমাদের দলের কর্মীদের মারধরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, আদালত তাদের রক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছে। পুলিশ প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করতে পারছে না। কলকাতা হাইকোর্টের একজন বিচারপতি এই কাজ করছেন। তাঁর জন্য গোটা বিচার ব্যবস্থা কলুষিত হচ্ছে। হাইকোর্টের বাকি বিচারপতিরা নিজেদের সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করছেন, নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছেন।’ এরপরই শুভেন্দু অধিকারীকেও নিশানা করেন অভিষেক। বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা একজনের কারণে কলুষিত হচ্ছে। অনেকেই বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না। শুভেন্দু অধিকারীর গাড়ি সাধারণ মানুষকে গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাচ্ছে। আর ওই বিচারপতি শুভেন্দুকে এমন রক্ষাকবচ দিয়েছেন যে আগামী দিনেও ওঁর কোনও অপরাধের জন্য পুলিশ পদক্ষেপ করতে পারবে না। অনন্তকালের জন্য রক্ষাকবচ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে যদি আদালত অবমাননার কারণে আমাকে জেলে যেতে হয়, কোনও সমস্যা নেই।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − ten =