ধূপগুড়িতে ঘাসফুলের দাপটে ম্লান পদ্ম

ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের গণনার শুরুতে পোস্টাল ব্যালটে বিজেপি আশার আলো দেখলেও এরপর ধীরে ধীরে বিজেপি প্রার্থী  তাপসী রায়কে পিছনে ফেলতে থাকেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। তখনই বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গে নির্মলবাবুকে বলতে শোনা গিয়েছিল ‘মর্নিং শোস দ্য ডে। বিজেপির কোনও কৌশল কাজ করবে না।’ বাস্তবে হলও তাই। ১০ রাউন্ডের শেষে বিজেপি প্রার্থী  মিতালি রায়কে ৪৪২৬ ভোটে হারালেন তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, তৃণমূল প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়ের প্রাপ্ত মোট ভোট ৯৬,৯৬১। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের প্রাপ্ত মোট ভোট ৯২,৬৪৮। সিপিএম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ইশ্বর চন্দ্র রায় পেয়েছেন মোট ১৩,৬৬৬ ভোট।

একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এও জানানো হয় যে,  জলপাইগুড়ির উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয় গণনা।ইভিএম ছাড়াও পোস্টাল ব্যালট, ইলেকট্রনিক্যালিক ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালটেরও গণনা হয়। দুটি ঘরে মোট ১৪টি টেবিলে প্রায় ১০০ জন গণনাকর্মী ছিলেন। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪১৬ জন।

এদিন চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত ভালো লড়াই হচ্ছিল বিজেপি-তৃণমূল দুই প্রার্থীর মধ্যেই। তবে পঞ্চম রাউন্ড থেকে অনেকটাই এগিয়ে যেতে থাকেন তৃণমূল প্রার্থী। এরপর অষ্টম রাউন্ডের শেষে প্রায় চার হাজার ভোট পিছিয়ে যান বিজেপি প্রার্থী। এরপর শেষ হাসি তৃণমূল প্রার্থীর মুখেই। ফল ঘোষণার পর বিজেপি প্রার্থী মিতালি রায় জানান, জনগণকে যাঁকে মনে করেছেন তাঁকে জিতিয়েছেন। আমরা জনগণের রায় মাথা পেতে নিলাম।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে শেষবার তৃণমূল জিতেছিল এই কেন্দ্রে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য এই এলাকায় এগিয়ে যায় তৃণমূল।

এদিকে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই উপ নির্বাচন বাংলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই নির্বাচন থেকে আঁচ করা যাবে বিজেপির জনপ্রিয়তা। সেই কারণেই বাংলার রাজনৈতিক মহল তাকিয়ে ছিল নির্বাচনের ফলাফলের দিকে। কারণ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে এই একটা উপনির্বাচনই কার্যত শাসক-বিজেপি উভয়ের কাছেই অগ্নিপরীক্ষার সামিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দু’পক্ষরই বড় বড় নেতারা প্রচারে এসেছিলেন। তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে পড়ে থেকেছেন ধূপগুড়িতে। তেমনই মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি ডঃ সুকান্ত মজুমদারকেও। চা বলয় চষে বেরিয়েছিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। প্রেস্টিজ ফাইট বলে কথা! কিন্তু এরই মধ্যে বিরাট টুইস্ট হয়। একদা তৃণমূল বিধায়ক মিতালি রায় অভিষেকের সভামঞ্চে থেকে নামার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হাতে তুলে নেন পদ্ম পতাকা। নিঃসন্দেহে বড় চমক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা হয়েছিল, এই দলবদল উপ নির্বাচনের আগে খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট বড় ফ্যাক্টর। তবে ফলাফল বলছে এই ফ্যাক্টর গেল বিজেপির বিরুদ্ধে। ফলাফল দেখে শুনে অনেকেই বলছেন, অনন্ত মহারাজ, মিতালি রায়ের যোগদান বিজেপিকে রাজবংশী ভোটের প্রশ্নে বাড়তি সুবিধা তো দিলই না বরং এক রকম ডুবিয়েই দিল।

এখানে বলে রাখা শ্রেয়, বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যুর কারণেই এই উপনির্বাচন। পরিসংখ্যান বলছে, ধূপগুড়ি বিধানসভার ২৬০ টি বুথে মোট ভোট পড়েছে ৭৮.১৯ শতাংশ। ভোটের হারের বিচারে তা ২০১৬ এবং ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় অনেকটাই কম। ২০১৬ ভোট পড়েছিল ৮৮ শতাংশ। আবার ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৭ শতাংশ। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছিল। ৪৩৫৫ ভোটে জয় পায় বিজেপি।১ লক্ষ ৩৩৩ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি পেয়েছিল ১,০৪,৬৮৮ ভোট। তবে উপনির্বাচনে আর সেই জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারল না বিজেপি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − five =