মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে রাজভবনে পালিত হল পশ্চিমবঙ্গ দিবস

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়ে রাজ্যপালকে রাজভবনে ২০ জুন তারিখে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন না করার অনুরোধ জানালেও তাতে কর্ণপাত করলেন না রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এরপর মঙ্গলবার রাজভবনে পালিত হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। এদিনের অনুষ্ঠান থেকে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস জানান, ‘‌রাষ্ট্রপতির বার্তা অনুযায়ী আমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।’‌ এরই পাশাপাশি তিনি এও বলেন, , ‘‌রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং বিবেকানন্দ বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য তাঁদের অবদান দিয়েছেন। আমি আজকের দিনে বাংলার নাগরিকদের এই দিনের শুভেচ্ছা জানাই। রাষ্ট্রপতি বার্তা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের দিবস পালন করা হচ্ছে। রাজ্যের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বাংলার প্রতিষ্ঠা উজ্জ্বল করেছেন। আমি বাংলার মানুষকে স্যালুট জানাই। দেশের ঐক্য এবং উন্নয়নে বাংলার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা এখন উন্নতির পথে। বাংলার সাফল্য ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলা তৈরি করেছে জাতীয় সঙ্গীত। বাংলায় অশান্তির জায়গায় নেই। হিংসার জন্য জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। আমাদের সংবিধান আমাদের ন্যায় বিচারের অধিকার দিয়েছে।’‌ তবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধের পরও এদিনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে এটাই স্পষ্ট রাজ্য-রাজভবন সংঘাতের আবহাওয়া জিইয়ে রাখলেন রাজ্যপাল।

এদিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন নিয়ে শাসক দল তৃণমূলের তরফ থেকে তুমুল সমালোচনাও করা হয় রাজ্যপালের এবং পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের ঘটনাকে নিয়ে। তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হয়, ‘ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের দাবি তুলেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সেদিন লক্ষ–কোটি বাঙালির হৃদয় ফুঁড়ে জন্ম নিয়েছিল আজকের পশ্চিমবঙ্গ। দিনটি তাই গৌরব বা আনন্দের নয়। সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে দিনটি দুঃখ, যন্ত্রণা, শোকের বার্তাবহ। রাজভবনে দিনটি পালন করার অর্থ মাউন্টব্যাটেনের অশরীরী আত্মা এখনকার ছোটলাটের উপর ভর করেছে।’

তবে এদিনের এই অনুষ্ঠানে খুশি বঙ্গ স্যাফ্রন ব্রিগেড। খুশি রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও। এদিনের এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে দিলীপ ঘোষ জানান, ‘‌সমস্ত রাজ্য তৈরি হওয়ার একটা দিন আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাসকে ঘেঁটে দিতে চাইছেন। তবু এটা ঐতিহাসিক সত্য। সঙ্গে প্রশ্নও তোলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তি জানানোর প্রসঙ্গেও। বলেন, ‘উনি এখানে আপত্তি জানানোর কেউ নন। উনি আজ আছেন, কাল থাকবেন না। ইতিহাস থেকে যাবে। আর উনি নিজে একদিন ইতিহাস হয়ে চলে যাবেন।’‌

তবে এদিনের  অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। প্রসঙ্গত, বিজেপির তরফ থেকেই ২০ জুন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের দাবি তোলা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ না রেখে রাজভবন তাতে সবুজ সংকেত দেয়। এরপর এদিন বিজেপি নেতৃত্বের পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ দিবসও পালন করতে দেখা যায় তাঁকে। এতে রাজনৈতিক বিশ্লষকদের ধারনা, সংঘাতের আবহ আরও বড় আকার নিতে চলেছে। এদিনের এই অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উপস্থিতিতে এনসিসি’‌র প্রতিনিধিরা প্যারেড করেন। স্কুলের ছাত্র–ছাত্রীদের বসে আঁকো এবং নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =