ভারতীয় রেল নিঃসন্দেহে দেশবাসীর লাইফ-লাইন। কারণ প্রতিদিনই দেশের কোটি কোটি মানুষ কর্মসূত্রে বা অন্য কাজে ভারতীয় রেল পরিবহণ ব্যবস্থার উপরেই আস্থা রাখেন। একইসঙ্গে ভারতীয় রেলকে দীর্ঘ দূরত্বের ভ্রমণের জন্য সুবিধাজনক এবং লাভজনক বলেও মনে করা হয়। এতে যাতায়াত করাও যে কোনও সাধারণ গাড়ির চেয়ে বেশি আরামদায়ক। ট্রেনে চাপলে, নিশ্চয়ই রেল স্টেশনের সাইনবোর্ডও চোখে পড়বে আপনার। সাইন বোর্ডে সবসময়ই হলুদ রঙের উপর কালো দিয়ে লেখা থাকে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, কেন স্টেশনের নাম শুধুমাত্র হলুদ-কালো দিয়েই লেখা হয়? কেন অন্য কোনও রঙ ব্যবহার করা হয় না?
আসলে এই হলুদ রঙ ব্যবহারের পিছনে আসলে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। যে মূল সাতটি রঙ রয়েছে তার মধ্যে থেকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের প্রেক্ষিতে আসলে হলুদ রঙ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত বেশি হবে, তত দূর থেকে দেখা যাবে রঙ। এই তালিকায় সব থেকে উপরে রয়েছে লাল রঙ। যে কারণে ট্র্যাফিক সিগন্যালে বা রেলের সিগন্যালেও লাল রঙ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, তাহলে লাল রঙ কেন প্ল্যাটফর্মের বোর্ডে ব্যবহার করা হবে না?
এর কারণ হল, হলুদ রঙের পার্শ্বীয় পেরিফেরাল দৃষ্টি লাল রঙের তুলনায় ১.২৪ গুণ বেশি। এটি এমন একটি বৈশিষ্ট্য, যা নির্ধারণ করে আপনার চোখের সরল রেখায় না থাকলেও আপনি কতদূর থেকে সেটি দেখতে পাবেন। সেই দিক থেকে লাল রঙের তুলনায় হলুদ রঙ এগিয়ে। এছাড়া, অন্ধকার, কুয়াশা বা কম আলোতেও লাল রঙের চেয়ে হলুদ রঙ বেশি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেটি চোখে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
অন্যদিকে, হলুদের উপর কালো ব্যবহার করার একমাত্র কারণ হল, হলুদ রঙের বিপরীতে কালো রঙ সবচেয়ে বেশি ভালো ফুটে ওঠে। ফলে লেখাটি আরও ভালো ভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। ট্রেন চালক দূর থেকে হলুদ রঙের এই বোর্ড দেখেই বুঝতে পারেন সামনে স্টেশন রয়েছে এবং তিনি তাঁর ট্রেনের গতি কমাতে শুরু করেন। এছাড়াও উজ্জ্বল রঙের এই বোর্ড দ্রুত গতিতে চলা ট্রেনের যাত্রীরাও দেখতে এবং পড়তে পারেন।
শুধু প্রযুক্তিগত কারণই নয়, হলুদ রংকে অনেকেই আনন্দ, বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তির প্রতীক। এটাও প্লাটফর্মে হলুদ বোর্ড রাখার পিছনে একটা কারণ। তবে মূল বিষয় হল, যে কোনও রঙের তুলনায় আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হলুদের বেশি।