বুধবার সকালে নন্দীগ্রামের সভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারির সুরে বলেছিলেন, ‘অভিষেক বলছে, ১০ লাখ লোক নিয়ে দিল্লি যাব। ওখানে লাঠিতে তেল মাখিয়ে রেখেছে। আগে ইউপি মানে উত্তরপ্রদেশ পেরিয়ে দেখাক না, কত দম আছে বুঝব! আরে আমরা টাকা আটকাইনি, চুরি অটকেছি।’ এরপর এদিন বিকেলেই শুভেন্দুর সেই মন্তব্যের পাল্টা উত্তর দিতে দেখা গেল তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ পূর্ব বর্ধমানের কালনার সভামঞ্চ থেকে শুভেন্দুকে বিঁধে জানালেন, ‘বিজেপি নেতা বলেছে, ডাণ্ডা পড়বে পিঠে দিল্লিতে। আমরা বাংলা থেকে গিয়ে আন্দোলন করলে মা-বোনেদের নাকি ডাণ্ডা মারবে। সেই ডাণ্ডা নাকি ছ’ফুটের৷ তাই বলছি একটু শরীরচর্চা করুন। ডাণ্ডা মারলেও আমাদের মেরুদণ্ড ভাঙবে না।’
তবে ২০২৩-এর পঞ্চায়েতে কিন্তু বারবার উঠে আসছে লক্ষ্মী ভাণ্ডারের প্রসঙ্গ। য়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এক বিরাট ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে। ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বারবার এসে পড়ছে সেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা। বুধবারও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়েও বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করতে দেখা যায় অভিষেককে৷ কারণ, পঞ্চায়েতের প্রচারের সময়, রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধানী সরকার এলে মা-বোনেদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা চার গুণ হয়ে যাবে৷ অর্থাৎ, এখন যেখানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়, সেখানে বিজেপি ক্ষমতায় এলে টাকা বেড়ে ২০০০ হবে৷ এমনকি, প্রকল্পের নাম বদল হবে বলেও জানান নেতারা৷ সুকান্ত-শুভেন্দুর বক্তব্য, বিজেপি ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নাম বদলে হবে ‘অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার’৷ এরই রেশ ধরে এদিন সুকান্ত-শুভেন্দুর এই ধরনের মন্তব্যেরও প্রত্যুত্তরে অভিষেক বঙ্গ বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করে বলেন, ‘সুকান্ত মজুমদার আর শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা হচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে। কে বেশি ঢপ মারবে।’ এই প্রসঙ্গে দেশের কালো টাকা উদ্ধারের পর ১৫ লাখ টাকা প্রতিটি নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-এ দেওয়ার বিষয়টি টেনে আনেন অভিষেক। এই প্রসঙ্গে অভিষেক কেন্দ্র-রাজ্য উভয়কে একসঙ্গে বিদ্ধ করে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদের মর্যাদা রেখে বড় ঢপ মারছে, বিরোধী দলনেতা ছোট পদে থেকে ছোট ঢপ মারছে।’ এরই রেশ ধরে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ১৫ লাখ দেবে, শুভেন্দু – সুকান্তরা বলছে ২০০০ দেবে। যে আপনার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে, সে আপনাদের অনুদান দেবে?’ একইসঙ্গে সংযোজন,‘আপনারা আপনাদের রাজ্যের সরকার যেখানে আছে সেখানে আগে মহিলাদের ১০০০ করে প্রতি মাসে দিন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বা অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার আগে দিয়ে দেখান। পরে বড় বড় কথা বলবেন।’ পাশাপাশি, এদিনের সভামঞ্চ থেকেও অভিষেকের বার্তা, ‘কানে শুনে নয়, চোখে দেখে’ ভোট দেওয়ার বিষয়।
কালনায় দাঁড়িয়ে অভিষেক এদিন এও বলেন, ‘পূর্ব বর্ধমান জেলা বিধানসভায় ১৬ আসনে, ১৬’টিতেই তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে৷ এবারও সব পঞ্চায়েত জিততে হবে। তাই ২০২১ এর মতো এবারও ২০২৩ সালে চোখে দেখে ভোট দিতে হবে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে দুয়ারে সরকারের প্রতিনিধি দুয়ারে রেশন দিয়ে আসবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির জন্য একমাত্র দায়ী হল এই প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি ভাইরাসের টিকা হল তৃণমূল আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
এদিন কেন্দ্র এবং রাজ্যের স্যাফ্রন ব্রিগেডকে ইডি-এবং সিবিআই ইস্যুতে বিদ্ধ করে অভিষেক জানান, ‘সমাজের একটা প্রথা ছিল, চোর চুরি করে জেলে যায়, এখন প্রথা চোর চুরি করে জেলে যায় না, বিজেপিতে যায়।’ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে দলগত হিসেবে বিজেপি কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে দাবি করেন অভিষেক। আর এই প্রসঙ্গেই সামনে আনেন দলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাও। বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকলে অন্যান্য দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এরই পাশাপাশি তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের বার্তা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েতের তিনটে স্তরের কাজের পর্যালোচনা তিনি নিজে করবেন। শুধু তাই নয়, এদিনের সভামঞ্চ থেকেও অভিষেক ফের হুঁশিয়ারির সুরে জানান, আগামী দেড় থেকে দুমাসের মধ্যে রাজ্যের একাধিক প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে রেখেছে তার বিরুদ্ধেও দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করবেন।