অভয়া কাণ্ডে কর্মবিরতির পিছনে বেসরকারি ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ উপার্জন ডাক্তারদের 

অভয়া কাণ্ডের বিচার চেয়ে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ রেখে বাম ও অতিবামের সমর্থনে আন্দোলন চালাতে দেখা গেছে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টকে। এদিকে সরকারি তথ‌্য বলছে, কর্মবিরতিতে সরকারি হাসপাতালে অসহায় রোগীদের পাশে না থাকলেও বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ডিউটি করে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছেন এই সবঅতিবিপ্লবীজুনিয়র ডাক্তাররা।

স্বাস্থ‌্যভবনের তথ‌্য বলছে, মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের চালু করা স্বাস্থ‌্যসাথী প্রকল্পের অধীনে রোগীদের চিকিৎসা থেকে এই জুনিয়ররা পেয়েছেন ৫৪ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। নবান্ন থেকে যে তথ্য মিলছে তাতে ৯ আগস্ট থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত স্বাস্থ‌্যসাথী বিমায় ৫৫ কোটি ছাড়াও স্টার হেলথ, ওরিয়েন্টাল ইনসিওরেন্স, নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসিওরেন্স, ন‌্যাশনাল ইনসিওরেন্সের মতো বহু মেডিক্লেম সংস্থার থেকে কয়েকশো কোটি টাকা রোজগার করেছেন এইপ্রতিবাদীজুনিয়র ডাক্তাররা। স্বাস্থ‌্যসাথীর ৫৫ কোটি জুনিয়র ডাক্তারদের পকেটে যাওয়ার তথ‌্য প্রকাশ্যে আসতে শনিবার এক্স হ‌্যান্ডলে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ কটাক্ষের সুরে জানতে চান, ‘বিপ্লবীরা কিছু বলবেন?’

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের স্বাস্থ‌্যসাথী প্রকল্প চালু করার উদ্দেশ‌ে, আমজনতাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া। নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে স্বাস্থ‌্যসাথী কার্ডের মাধ‌্যমে চিকিৎসা করাতে গেলে যে ডাক্তার রোগীকে দেখছেন তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর প‌্যান নম্বর, কোনহাসপাতালেতিনিপোস্টেডতারবিস্তারিততথ‌্যস্বাস্থ‌্যভবনেরকাছেপাঠাতেহয়।স্বাভাবিক ভাবেই সরকারি হাসপাতালে আন্দোলন চালিয়ে বেসরকারি নার্সিংহোমে রোজগারের তথ‌্য লুকানো যায়নি।

স্বাস্থ‌্যভবন সূত্রের খবর, ৫৬৩ জন জুনিয়র ডাক্তারেরকীর্তিসামনে এসেছে। তার মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আয়ের ভিত্তিতে প্রথম পাঁচ জনের আয়ের নিরিখই চমকে দেওয়ার মতো।মেডিক‌্যাল কলেজের চিকিৎসক সমুদ্র গুপ্তের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৮৭৯। আন্দোলনের নামে যিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না করলেও দিব্যি রোগী দেখেছেন গ্রিনভিউ ক্লিনিক অ‌্যান্ড নার্সিংহোম, মণ্ডল নার্সিংহোম, নৈহাটি হেলথ কেয়ার ইনস্টিটিউট, নিউ মেডিক‌্যাল নার্সিংহোম, পরিজন নার্সিংহোম, সোনালি নার্সিংহোমে। ৯ অগাস্ট থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে বেসরকারি নার্সিংহোমে ১২৪ জন রোগী দেখে স্বাস্থ‌্যসাথী থেকে রাজ‌্য সরকারের ১৫ লক্ষ ২৯ হাজার ৬৯০ টাকা রোজগার করেছেন তিনি।

এই তালিকায় চিকিৎসক সমুদ্র গুপ্ত একা নন, অগাস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একাধিক বেসরকারি হাসপাতালনার্সিংহোমে মেডিক‌্যাল কলেজের  ডা. নাসিম মণ্ডল (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৬৫৪৩১) ৮২ জনের চিকিৎসা করেছেন চার্নক হাসপাতাল ড‌্যাফোডিল হাসপাতাল, সান মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের মতো একাধিক বেসরকারি স্বাস্থ‌্যকেন্দ্রে। রাজ‌্য সরকারের স্বাস্থ‌্যসাথী প্রকল্পে তিনি ৩২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। ডা. বিপুল রায় (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৬৬০৩৭) ৩৬টি স্বাস্থ‌্যসাথী ক্লেমে বেসরকারি হাসপাতালে ১৬ লক্ষ ৮৭ হাজার ৪৩৭ টাকার চিকিৎসা করেছেন। মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক অভিষেক চক্রবর্তীও (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৬৮৩৩৭),  চুটিয়ে প্রাইভেট প্র‌্যাকটিস করেছেন। বহরমপুর সিটি হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, ডাক্তার পি কে সাহা হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডে চুটিয়ে রোগী দেখেছেন। স্বাস্থ‌্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসা করেছেন ৫৩ লক্ষ ২২ হাজার ৬০০ টাকার।

এমন তথ‌্য সামনে আসার পর জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের দাবি, বামঅতিবামদের সুচারু পরিকল্পনাতেইএমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন মুনাফালোভী চিকিৎসকদের একাংশ। একদিকে তাঁরা অভয়ামঞ্চ তৈরি করে মানুষের নজর ঘুরিয়েছেন। অন‌্যদিকে সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি ডেকে বিনামূল্যের চিকিৎসা থেকে আমজনতাকে বঞ্চিত করে নার্সিংহোমবেসরকারি হাসপাতালে বাধ‌্য করেছেন রোগীকে আসতে। সেখানে চিকিৎসা করে কোটি কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 3 =